বোরহানউদ্দিনে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর চতুর্থ ধাপের গৃহ হস্তান্তর কর্যক্রম উদ্বোধন

মোঃ ইকবাল হোসেন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার ২২ মার্চ সারাদেশের সকল উপজেলায় চতুর্থ ধাপের ৩৯ হাজার ৩শ’ ৬৫টি গৃহ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের কাছে হস্তান্তর কর্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়
(প্রধানমন্ত্রী) ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সারাদেশের সকল উপজেলায় একযোগে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের কাছে এই গৃহ হস্তান্তর করেন
গৃহের জমির মালিকানা স্বামী-স্ত্রীর নামে দিয়ে দেওয়া হয়। জমির রেজিস্ট্রেশন, মিউটেশন ও দাখিলা পর্যন্ত তাদের নামে করে দেওয়া হয়। তাই গৃহের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের দায়িত্বও তাদেরকে দেওয়া হয়।
শুধু সরকারি খাস জমিতেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকেও জমি ক্রয় করে এই প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সহায়তাও গ্রহণ করা হচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে দেশে প্রথম ভূমিহীনদের পূনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমান লক্ষীপুর রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে একই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে পুনরায় জমি ও গৃহের মালিকানা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এই প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবার প্রতি ৫ জন হিসেবে এই কার্যক্রমের উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প সরাসরি পুনর্বাসন করেছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবারকে। ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সমান কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে আরো ২ লাখ ১৬ হাজার ৭০৪টি পরিবার।
২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে দেশের কোন মানুষ ভূমিহীন- গৃহহীন থাকবে না বলে ঘোষণা করেন। তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) এই ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী শুধু মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি গৃহ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় সারাদেশে পুনর্বাসন কার্যক্রমের মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ মানুষ।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে পরিবারভিত্তিক স্বামী-স্ত্রী’র যৌথ নামে ২ শতাংশ জমির মালিকানার দলিল ও নামজারি সম্পাদন করে দেওয়া হয়। এই জমিতে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ২ কক্ষ, প্রশস্ত বরান্দা, একটি স্যানিটারি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর সম্বলিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব ডিজাইনের একটি অনন্য সাধারণ গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক তার বক্তব্যতে বলেন, ৪র্থ পর্যায়ে ১০৬টি গৃহের বরাদ্দ পাওয়া যায়। যার মধ্যে কুতুবা ইউনিয়নের ছাগলা খাস জমিতে ০৪টি, পক্ষিয়া ইউনিয়নের উদয়পুর মৌজায় ক্রয়কৃত জমিতে ৫২টি, হাসাননগর ইউনিয়নের (খাস মহল বাজার সংলগ্ন) হাসাননগর মৌজায় ক্রয়কৃত জমিতে ১৪টি এবং টবগী ইউনিয়নের দালালপুর মৌজায় ক্রয়কৃত জমিতে ৩৬টি গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে পক্ষিয়া ইউনিয়নের উদয়পুর ৩৭টি, হাসাননগর ইউনিয়নে ১৪টি এবং কুতুবা ইউনিয়নে ৪টি গৃহ নির্মাণ করা সম্পন্ন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে প্রদত্ত নমুনা মোতাবেক কবুলিয়ত দলিল সম্পাদন, নামজারি সম্পন্ন ও গৃহ প্রদানের সার্টিফিকেট প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় সুপেয় পানি ও বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে উপকারভোগীগণ এবং পরবর্তীতে তাদের ওয়ারিশগণ ০২ (দুই) শতাংশ জমিসহ গৃহের মালিকানা লাভ করবেন।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হকের সভাপতিত্বে, অনুষ্ঠানে উপজেলা ভুমি কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুন্নি ইসলাম,
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও বড়মানিকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন হায়দার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব রাসেল আহম্মেদ মিয়া, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহফুজা ইয়াসমিন, বোরহানউদ্দিন থানার ওসি তদন্ত মো রাজিব , পক্ষিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন সরদার, টবগী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম হাওলাদারসহ উপজেলার সকল কর্মকর্তাগন, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের প্রতিনিধিসহ উপজেলায় কর্মরত প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ও উপকারভোগীগন উপস্থিত ছিলেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।