ভোলার শীবপুরে ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ হলো ৪৫ হাজার টাকা !
(অভিযুক্ত শিশির)
ইয়ামিন হোসেন/এইচ এম এরশাদ ॥ বর্তমান সরকার অপরাধ দমনে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং আইনী সেবা নিশ্চিত করতে বিট পুলিশিং সেবাসহ বিভিন্ন ভাবে সচেতনতা করে যাচ্ছেন জেলা পুলিশ। সরকার এবং প্রশাসনের এমন নানা চেষ্টা অব্যাহত রাখার পরেও কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম্য মাতাব্বরদের কারনে অপরাধ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, মারামারিসহ বিভিন্ন ঘটনাকে টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে অপরাধীকে পূণরায় অপরাধ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অপরাধ।
বিশেষ করে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টা এ ধরনের ঘটনা অহরহ হচ্ছে মফস্বল এলাকায়। এ ঘটনাগুলো প্রশাসন শক্ত ভুমিকা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধী শাস্তি নিশ্চিত করলে কিছুটা হলেও ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার অপরাধগুলো বন্ধ হয়ে যেতো বলে মতপ্রকাশ করেন সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু এ ধরনের অপরাধীদের দমনে যারা প্রশাসনকে সহযোগীতা করবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষক কিংবা গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাদের সহযোগীতায় যদি হয় রফাদফা আর পার পেয়ে যায় অভিযুক্ত তাহলে এ ধরণের অপরাধ হ্রাস পাবে কি ভাবে ?
জানা গেছে, তেমনি বিয়ের প্রলোভনে এবং এক সন্তানকে হত্যার ভয় দেখিয়ে ভোলা সদর উপজেলার শীবপুর ৪নং ওয়ার্ডের শান্তিরহাট সংলগ্ম তালাকপ্রাপ্ত এক নারীর সাথে প্রেম। অতঃপর শারিরীক সম্পর্ক করার অভিযোগ উঠে একই এলাকার মিলন মিয়ার ছেলে শিশিরের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ৫ মাসের সম্পর্কে তাদের মধ্যে একাধিক বার শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী। সর্বশেষ গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় ওই নারীর সাথে শিশির দেখা করতে এসে শারিরীক সম্পর্কের চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় ওই নারীর চাচী দেখতে পেয়ে শিশিরকে আটক করে প্রতিবেশী গ্রাম পুলিশকে ডেকে এনে তার হাতে সোপর্দ করেন। গ্রাম পুলিশ আবুল বাশার বিষয়টি ছেলের অভিভাবকদের জানালে তারা এসে জোরপূর্বক শিশিরকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় ভুক্তভোগী নারী ও তার চাচীকে মারধর করার অভিযোগ ও করেন ওই নারী। তবে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গ্রাম পুলিশ আবুল বশার। তিনি বলেন, আমার সামনে থাপ্পড় দিয়েছে ছেলের আত্মীয়-স্বজনরা।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে আইনি সহযোগীতা চাইলে ভোলা সদর থানার এ এস আই আজিম ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছেন এবং ঘটনার পরের দিন এসআই জসিম উদ্দিন বিষয়টি দেখবেন বলে শিশিরের পক্ষের স্থানীয় মাতাব্বরদের সাথে কথা বলে। ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনি সহযোগীতা না করে উল্টা সাংবাদিকদের বলেন এটা মিথ্যা ঘটনা এবং কিছুই ঘটেনি। মেয়ে খারাপ। আপনি কিভাবে বুঝলেন তদন্ত না করে ঘটনা মিথ্যা বা কিছু ঘটেনি এর উত্তর দিতে পারেনি এসআই জসিম। যদিও এই ঘটনায় তদন্তসাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ওসি শাহীন ফকির।
এই ঘটনা নিয়ে ভোলার বাণী’সহ বিভিন্ন অনলাইনে ১৪ই মার্চে সংবাদ প্রকাশিত হলে স্থানীয় মেম্বার মাহাবুব আলম শুক্কুর, প্যানেল চেয়ারম্যান রাজিবসহ গ্রাম্য মাতাব্বররা অভিযুক্ত শিশিরকে উপস্থিত না রেখে এবং ৪৫ হাজার টাকা ভুক্তভোগী তালাকপ্রাপ্ত নারীর ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই টাকা স্থানীয় মাষ্টার মিজানুর রহমানের কাছে জমা রয়েছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী নারীর ভাই। তিনি বলেন, এলাকার মেম্বারসহ সবাই বসে ফয়সালা করে দিয়েছে এখন কি করার আছে ? আমরা তো এই এলাকায় থাকতে হবে, গরীব মানুষ। ফয়সালার সময় কি অভিযুক্ত শিশির উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না শিশির উপস্থিত ছিলেন না। রাজিব মেম্বার, আমাগো মেম্বারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে শিবপুর ৪নং ওয়ার্র্ডের মেম্বার মাহাবুব আলম শুক্কুর বলেন, আমরা কিছু খরচ দিয়ে ফয়সালা করে দিয়েছি। তবে অভিযুক্ত শিশির ফয়সালার সময় উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান মেম্বার শুক্কুর।
ভোলা জেলা এইচআরডিএফ (মানবাধিকার সংস্থা) সভাপতি মোবাশ্বিরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ধর্ষণ বা ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনা কোন ভাবেই গ্রামে মিমাংসা যোগ্য নয়। প্রশাসনকে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
ভোলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইফতারুল হাসান শরীফ বলেন, ধর্ষণ বা ধর্ষণের অভিযোগের কোন ঘটনা কোর্র্টেও বাহিরে ফয়সালা করার সুযোগ নেই। এটা সম্পন্ন রাষ্ট্রের এখতিয়ার বলে জানান তিনি। ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের কোন অভিযোগের ফয়াসালা গ্রামে করার সুযোগ নাই।