বিলুপ্তির পথে বোরহানউদ্দিনের “তেতুলিয়া রিভার ইকোপার্ক”

ইকবাল হোসেন: ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গংগাপুর ইউনিয়ন তেতুলিয়া নদীর তীর ঘেষা ভেড়ীবাধেঁ ২০১৬ সালে নির্মিত হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন তেতুলিয়া রিভার ইকো পার্ক। প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য দিয়ে সাজানো ছিলো গোটা এলাকা। প্রবেশদ্বারে দৃষ্টিনন্দন গেইট, দুই পাশে হাজারো গাছ, চারপাশে কাটা তারের বেড়া, সারি সারি বসার বেঞ্চ, ক্যান্টিন, নামাজের স্থান, শৌচাগার, বট মূল, বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, হরিণ, ময়ূর সহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর ভাস্কর্য, শিশুদের বিনোদনের নানান সমগ্রী যা মন কেড়ে নিতো যে কারো। সব কিছুতেই ছিল স্বয়ং সম্পূর্ণ।  এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও গাছে গাছে পাখিদের কলকাকলি দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। শীত মৌসুমে দূর দূরান্ত থেকে পিকনিকের জন্য আসতো অনেকে।  বিভিন্ন সময়ে হওয়া প্রাকৃতিক দূর্যোগ, রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে মাত্র ৭ বছরেই সেই প্রাকৃতিক স্বর্গোদ্যান এখন পরিনত হয়েছে ধ্বংসস্তূপ ও শ্মশানপুরীতে।

তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কূদদ্দূস এর তত্বাবাধনে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে সংস্কার ও তদারকি না থাকায় ভেঙ্গে পড়ে আছে ইটের তৈরি নানা স্থাপনা ও বন্য প্রাণীদের ভাস্কর্য। পার্কে পরে থাকা এসব মালামাল নিয়ে যাচ্ছে অনেকে। নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সরকারি মালামাল। পার্কটি আজ বিলীন হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে স্থানীয় গ্রামবাসী এবং পর্যটকরা।

তাদেরই একজন স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ সিহাব। তিনি জানান, বোরহানউদ্দিনে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। মানুষ শহরের কোলাহল ছেড়ে পরিবার নিয়ে এখানে এসে সময় কাটাতো। কিন্তু কোনো তত্ত্বাবধায়ন না থাকায় সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এখানে এখন আর আগের মতো কেউ আসেনা। পার্কটি আবারো সংস্কার করে পুনরায় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবী জানান তিনি। পর্যটন কেন্দ্র হলে আশপাশের গ্রামের অনেকের কর্মসংস্থান হতো।

আব্দুল মান্নান নামে আরো একজন জানান, পার্কটি যখন তৈরি করা হয়েছিল তখন এখানে শত শত মানুষ আসতো।এখনও অনেকে মাঝে মাঝে এখানে ঘুড়তে আসে। আগের মতো পরিবেশ না থাকায় এসে চলে যায়। পার্কটি থাকা অবস্থায় আমাদের এলাকার অনেকে বিভিন্ন কিছু বিক্রি করে সংসার চালাতো।

বোরহানউদ্দিন মহিলা ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক (অর্থনীতি) মনিরুজ্জামান বলেন, শিশু কিশোর সহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের বিনোদন ও পর্যটকদের জন্য পার্কটি পূনরায় সংস্কার করার দাবী জানাচ্ছি।

গঙ্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন জানান, পার্কে সড়ক যোগে সরাসরি আসার জন্য যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ছিলো না। নৌকায় করে খেয়া পার হয়ে যেতে হতো। সেখানে এখন ব্রিজের কাজ চলছে। পার্কটি সংস্কার করলে আগের চেয়ে পর্যটক বাড়বে। তাই পার্কটি সকলের বিনোদনের জন্য পুনরায় সংস্কার করা জরুরি।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক বলেন, পার্কটির কথা আমি শুনেছি এখনো দেখিনি। তবে বোরহানউদ্দিনের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় এবং সুস্থ বিনোদনের জন্য পার্কটির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।  ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।