মধ্যরাত : পর্ব-১৪০
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : দোলার হাতের স্পর্শে আমার সব সময় বড়দির ¯েœহ-মায়া-মমতা-আদর-যতেœর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমার দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে। দোলা বলল, দাদু তুমি কাঁদছ ? আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, ফুলে ফুলে কাঁদলাম। মনে যত দুঃখ ছিল কেঁদে কেঁদে আমি যেন শন্তি পেলাম। সুশান্ত দৌড়ে এল। কিরে প্রান্ত তুই কাঁদছিস ? আমি কচকে বলে দিব, কচ যেন বিয়ের পর দোলাকে নিয়ে তোর কাছে থেকে তোকে সব সময় দেখা-শুনো করে।
আমি মনে হাসলাম। সুশান্তর বয়স হয়েছে, ছেলে-মেয়ে হয়নি, বুদ্ধি পাকেনি। আমি বিয়ে করিনি, মাঝা-মাঝি বয়সে এসে দাঁড়ালাম। কিন্তু জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। কেউর উপর আশা করতে নাই। আশা করলে মানুষ আরও বেশী দুঃখ পায়। সেজন্য আশা করে আমি আর দুঃখ পেতে চাইনা। জীবন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলির ঘানি আর নাইবা টানলাম। দোলা বলল, দাদু স্যুপ এনে দেই, তুমি খেয়ে ঘুমোও। আমি বললাম, আমার ঘুম আসেনা। জীবনে কত রাত, কত দিন আমি ঘুমুইনি। কে তার খোঁজ রাখে ? না দাদু, আমি তোমার কাছে বসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেই।
অনেক রাত দোলা আমার মাথার কাছে বসে বসে ঘুমে ঢুলছে। আমি বললাম, দোলা যাও বিছানায় গিয়ে ঘুমোও। দোলা ঢুলতে ঢুলতে ওর ঘরে চলে গেল। সুশান্ত উমা ওর ঘরে ঘুমাচ্ছে। পথ দিয়ে অনেক গাড়ী আসছে, যাচ্ছে। এত গাড়ী কোথায় যায় ? এত বড় মহানগরীর বুকে কাজের তাগিদে মানুষ ছুটে চলেছে ভাগ্যের অন্বেষণে। ভাগ্য একটা কুহকিনী তাকে ধরা যায়, কিন্তু ছোঁয়া যায় না। ভোর হলো গাড়ীগুলো আরও দ্রুত দৌড়ে চলেছে। অফিস, আদালত, কোর্ট, কাছারি, ভার্সিটি, কলেজ, স্কুল আরও আরও কত অফিস আমার এত নাম আজ আর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মনে আসছেনা। আমি নিজেই একটু তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়লুম। দরজার ছিটকানী খুলে বাহিরে পা রাখলাম। দোলা দৌড়ে এল, দাদু কোথাও যাও। আমি বললাম, একটু হাঁটা-হাটি করতে যাই। বলল, দাদু তোমার সাথে সাথে আমি হাটব। আমি থাকব। আমি বললাম, আরে পাগলী, তুইকি অনন্তকাল ধরে আমার সাথে থাকতে পারবি ? দোলা বলল, দাদু পারব।
আমি আর কোন কথা বললাম না। বললাম, চল। ও আমার সাথে ফুটপাত দিয়ে অনেক দূর হাটল। সত্যি দোলা সাথে থাকতে আমি আজ একটু অনেক বেশী মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে হাটলাম। অসুখের পর থেকে আমার মনের সাহস অনেক কমে গেছে। ধৈর্য্যও অনেক হারিয়ে ফেলেছি। এজন্যই বোধ হয় সকলে বিয়ে করে সংসার বাঁধে। ছেলে মেয়ে হয়। তারা বড় হয়ে চাকরী-বাকরী করে। তারা আবার সংসার করে। তারপর বুড়ো মাকে, বাবাকে কেউ কাছে এনে রাখে, রাখতে ভালবাসে। কেউ দূরে বাবা-মাকে রেখে খোঁজ-খবর নেয়। বছরে এক-আধবার যেয়ে দেখে এসে। আবার কেউ কেউ বাবা-মা ভাই-বোনের কোন খোঁজ নেয় না।
(চলবে—–)