রফিক সাদী ॥ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, দলীত হরিজন ভাতা, বেঁধে জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তির ভাতার টাকা উপকারভোগীর ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে পাঠায় সরকার। তজুমদ্দিন উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৫ শত জন। বেশ কিছুদিন ধরে এসব ভাতাভোগীদের নগদ অ্যাকাউন্টের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে তুলে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। এর আগে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তুলে নিলেও তা উদ্ধার হয়নি। এসবের প্রতিকার চেয়ে থানায় একাধিক জিডি হলেও টাকা উদ্ধার বা প্রতারক চক্র শনাক্ত হয়না।
থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি উল্লেখ করে মলংচড়া ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী হনফা বেগম বলেন, মোবাইল নম্বরে কল করে সমাজসেবা অফিসের পরিচয় দিয়ে ওটিপি নম্বর নেয়। এরপর থেকেই আমার অ্যাকাউন্ট শূন্য হয়ে যায়। অপর জিডিকারী শম্ভুপুর ইউনিয়নের ফয়েজ উল্লাহ জানান, সমাজসেবা দপ্তরের অফিসার পরিচয় দিয়ে ০১৩০৬০৮০৫৫৪ নাম্বার থেকে কথা বলে নাম ঠিকানা মিলায় এবং ম্যাসেজ পাঠিয়ে কোড নেয়। পরে দেখি মোবাইলে টাকা নেই। একই অভিযোগে থানায় জিডি করেন, শম্ভুপুরের ফাহিমা বেগম, শাজাহান মিয়া,নুরনবী, চাঁদপুর ইউনিয়নের রুহুল আমিন সহ ১৫ জন।
চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ কিরণ বলেন, প্রতিদিন অনেক ভাতাভোগী এসে জানান প্রতারনার মাধ্যমে তাদের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একটি প্রতারক চক্র এই কাজ করছে। চক্রের সদস্যরা উপকারভোগীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে মোবাইলে কল করে তাদের ওটিপি নম্বর নিয়ে উত্তোলন করছে ভাতার টাকা। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রায় দিনই সুবিধাভোগীরা ফোন করে বা অফিসে এসে প্রতারণার কথা জানান। ১০-১৫টি জিডির কপি জমা হয়েছে। উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় এবং উপ পরিচালকের মাধ্যমে জেলা আইন শৃংখলা মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। ডিজির কপি জমা দেয়া হয়েছে।
তজুমদ্দিন থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মাকসুদুর রহমান মুরাদ জানান, প্রায় দিনই ভাতাভোগীদের টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাচ্ছি। তবে কেউ মামলা করতে আগ্রহী হয়না। তারপরও জিডির সুত্র ধরে প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম বলেন, ভাতাভোগীদের অধিকাংশেরই তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা কম। তাই তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বেশি। জনসচেতনতার জন্য প্রশাসনের পক্ষ হতে মাইকিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন দুলাল বলেন, উপকারভোগীদের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর প্রতারক চক্র কীভাবে পেল তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। চক্রের হাত থেকে জনগণকে বাঁচাতে হবে।
সম্পাদকঃ মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান