মধ্যরাত : পর্ব-১২৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : দোলা চুপ করে শুনল। আর কোন কথা বললনা। নীরবে এসেছিল, নীরবে চলে গেল। উমা পাশের ডাইনিং রুমে থেকে সব শুনল। আমার কাছে এসে একটা চেয়ার নিয়ে বসল। বলল, প্রশান্ত দা আপনার সাতে একটা কথা আছে। সুশান্তও আপনাকে বলতে চেয়েছে। আমি বললাম, কথাটা কি খুব জরুরী। উমা উঠে গিয়ে সুশান্তের কাছে গিয়ে ওকে ডেকে নিয়ে এল। সুশান্ত বলল ও আরও একটু সুস্থ্য হোক। উমা বলল, ওনিত অনেক সুস্থ্য এখন। সুশান্ত বলল, মেয়ে মানুষের পেটে কথা থাকে না। আমি বললাম, কি-রে-সুশান্ত।
সুশান্ত বলল কচের দাদা সেদিন আমার কাছে এসেছিল। দোলার সাথে কচ এর বিয়ের সম্বন্ধে দিয়ে গেল। বলল, আপনি প্রশান্ত বাবুর খুব ঘনিষ্ট বন্ধু, আপনি একটু এ বিয়ের দু’পক্ষের থেকে ঘটকালি করুন। আপনার বাসায় মেয়েটিকে দেখে আমার খুবই পছন্দ হল। আমার ভাইকে আপনারা দেখেছেন অপছন্দ হয়নি নিশ্চয়। আমি বললাম, সুশান্ত তুমি তাকে কি বললে ? সুশান্ত বলল, প্রশান্ত এখন অসুস্থ্য, একটু সুস্থ হলে ওর সাথে আলাপ করে আমি আপনাকে জানাব। আমি বললাম, সুশান্ত ছেলেটিকে আমি দেখেছি। লেখা-পড়ায় শরীর, স্বাস্থ্য, জ্ঞানে, গুনে অদ্বিতীয়। চমৎকার গীটার বাজায়। বেহালার করুন রাগ-রাগিনী তুলতেও ওস্তাদ বলতে পার। ওর মত ছেলের কাছে দোলাকে সমর্পন করতে পারলে আমি নিজকে ভাগ্যবান মনে করব। আমি বড়দিকে চিঠি দিয়েছি। বড়দিও চিঠি পেলে তোকে জানাব।
সুশান্ত খুব খুশী হল। উমা আরও খুশী কি জমা দোলার বিয়ে হবে। উমা বলল, প্রশান্ত দা আমাদের টরেন্টোর বাসায় বিয়ে হবে। সব কেনা কাটা কিন্তু আমি করব। জানেন প্রশান্ত দা টরেন্টোয় শাড়ীর অভাব নেই, বানারসী, কাতান, তানচুই কাতান, সিল্ক, মাইশুর সিল্ক, যা চাবেন সব পাবেন। আমি বললাম, বোন ভগবানের আদেশ প্রজাপতির নির্বন্দ থাকলে এ বিয়ে হবে। আশা রাখেন, আর দোলাকে আর্শিবাদ করেন মেয়েটা যেন সুখী হয়। সেদিনের কথা আর বেশী এগুলনা। সেখানেই চুপ হয়ে গেল। সুশান্ত কখন কি খাব, কখন স্যুপ খাব একটা লিষ্ট করে দোলার হাতে দিল। উমাকে নির্দেশ দিল, প্রশান্তকে যতজলদি পার সুস্থ্য করে তোল।
বিকেলের দিকে দরজায় বেল বেজে উঠল। আমি দোলাকে ডাকলাম দোলা দরজা খুলে দিল। শ্যামল ভবতোষ ওর বৌ সকলে ঘরে ঢুকল। ভবতোষ বলল, আমি এ কয়দিন আসতে পারিনি। শ্যামল বাংলাদেশে গিয়েছিল কি এক জরুরী কাজে এই কালই এল। ভবতোষ বলল আবার কানে এক ইনফ্যাকশন হয়ে বিছানা নেবার যোগার হল। ভবতোষ বলল, প্রশান্ত বাবু মাফ করবেন। আমার অপারগতার জন্য। আমি বললাম, না না ছিঃ ছিঃ কিযে বলেন। আমার বন্ধু বন্ধুপতœী এসে গেল। বেশী অসুবিধা হয়নি। আর তা ছাড়া দোলা আমার কাছে কাছেই ছিল। দোলার সেবা, আমার বন্ধুপতœী উমার যতেœ, আমি কিন্তু জনকে তাড়াতাড়ি সেরে উঠলাম।
আমাদের ভার্সিটির বন্ধুরা সব এসেছিল। আমাকে অনেক সাহস ও অভয় দিয়েছিল। রাহাত খান এসেছিলেন, ওনিও ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ব্লাড ইউরিন সব টেষ্ট করিয়ে ছাড়লেন। সত্যি ভদ্রলোক খুব বিবেচনাহীন। ওর দেওয়া রক্ত লাল গোলাপ গুলি, এখন আমার দিকে চেয়ে প্রেরণা দিচ্ছে। ভবতোষ, শ্যামল ওরা গোলাপ গুলির দিকে তাকিয়ে দেখল। আমি বললাম, তা আপনাদের দেশের খবর ভাল ? শ্যামল বলল ভাল। আপনি ঘাবড়ে যাবেন না প্রশান্ত বাবু, ভবতোষ বলল। আমি বললাম, ঘাবড়ে গিয়ে আবার শক্ত হয়ে সাহস সঞ্চয় করে সুশান্তকে ডেকে আনলাম। সুশান্ত এসে আমাকে অনেক অনেক সাহস দিয়েছে। সত্যি অসুখ বিসুখ হলে মানুষ বড় ভেঙ্গে পরে। আমারও সেই দশা হয়েছিল। দোলাকে চা দিতে বললাম, দোলা চা করে এখানে দিয়ে গেল।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।