ভোলায় গরম বিটুমিন নিক্ষেপ, ঝলসে গেল অটো চালক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোলায় শ্রমিকদের নিক্ষিপ্ত গরম বিটুমিনে ঝলসে যাওয়া অটোচালক ফিরোজ এখন ভোলা সদর হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোলা সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বার্ন ইউনিটের বিছানায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন অটো চালক ফিরোজ। তার হাত ও পা নিক্ষিপ্ত গরম বিটুমিনে ঝলসে গেছে। ফিরোজের পাশে বসে আছেন তার মা বিবি রাবেয়া বেগম ও বাবা মোঃ বাবুল। তারা ভোলার বাণীকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের ছেলে ফিরোজ কিডনির সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তাই, অটো রিকশা চালিয়ে আয় করছেন। কিন্তু কেন অন্যায়ভাবে আমাদের ছেলেকে শ্রমিকরা গরম বিটুমিন নিক্ষেপ করে হাত-পা ঝলসে দিল আমরা এর বিচার চাই।
সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাবুলের ছেলে অটো চালক ফিরোজ জানান, গত কয়েকদিন যাবত যুগিরঘোল থেকে শিবপুর ইউনিয়নের শান্তির হাট বাজার পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। তিনি বুধবার বিকেলে শান্তির হাট থেকে ভোলা সদরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পাতা খোলা মসজিদের সামনে আসলে সেখানে পিচ ঢালাইকৃত রাস্তায় ভুলবশত তার অটোর চাকা উঠে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই কাজের দায়িত্বে থাকা শ্রমিকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জামাল নামে এক শ্রমিক তার হাতে থাকা গরম বিটুমিনের কেতলি থেকে অটোচালকের উপর নিক্ষেপ করেন। এতে অটোচালকের ডান হাত ও ডান পায়ে গরম বিটুমিন পড়ে অনেকাংশে ঝলসে যায়। তখন রিকশা চালক নিজেই দৌড়ে ভোলা সদর হাসপাতালে ছুটে গিয়ে চিকিৎসা নেন।


হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অটোরিকশা চালক ফিরোজ ও তার বাবা-মা বলেন, হাসপাতাল থেকে ওষুধের নাম লিখে ফিরোজের নাম কেটে দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়িতে বসে রোগীর চিকিৎসা নিতে বলছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মেহেদী হাসান বিপ্লব বলেন, এ বিষয়ে বার্ন ইউনিটের দায়িত্বে থাকা সার্জারি চিকিৎসক ভালো বলতে পারবেন। তিনিই ওই রোগীর চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে বার্ন ইউনিটের দায়িত্বে থাকা সার্জারি চিকিৎসক ডাঃ সবুজ কুমার পাত্র বলেন, গরম বিটুমিন ছোড়া রোগী আশঙ্কামুক্ত। তাই, রোগী ইচ্ছে করলে বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন।
অটো চালকের উপর গরম বিটুমিন নিক্ষেপের কথা স্বীকার করে জামাল বলেন, অটো চালককে সাইড দিয়ে চলতে বলা হলেও তিনি তা মানেননি। তাই, রাস্তায় বিটুমিন দিতে গিয়ে অসাবদানতা বশত অটো রিকশা চালকের হাতে-পায়ে লেগেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে বিটুমিন নিক্ষেপ করা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
রতনপুর বাজা থেকে শান্তিরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা এলজিইডির অধীনে এ সংস্কারের কাজ করছেন ভোলার ঠিকাদার মোঃ আবু সায়েম। তিনি বলেন, এটা ঠিকাদারের কর্মচারিদের দোষ নয়। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে করেনি। তবুও ওই রোগী যেহেতু গরিব। তাই, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমি এ মুহূর্তে ভোলার বাইরে রয়েছি।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো রাস্তা বন্ধ করে ওই সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। ঠিকাদারের লোকজন ওই রাস্তা দিয়ে কোন যানবাহন কিংবা পথচারিদের চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন জানান, রাস্তা বন্ধ করে সংস্কারের কাজ করার কারণে ওই রাস্তা দিয়ে কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছেনা।
এ বিষয়ে এলজিইডি ভোলার নির্বাহি প্রকৌশলী মঃ ইব্রাহীম খলীল বৃহস্পতিবার ভোলার বাণীকে জানান, ঘটনা আমি বুধবার রাতে জেনেছি। তিনি ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গেয়ে আরও বলেন, রাস্তায় যতটুকু বিটুমিন দেওয়া হয় ততটুকু রাস্তা বন্ধ না করলে যানবাহনের চাকায় বিটুমিন নষ্ট হয়ে যায়। তাই, বিটুমিন স্প্রে করার সময় অটো চালকের শরীরে লেগে ঝলসে যায়। তবে, যেহেতু ওই রিকশা চালক গরিব। তাই, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তবে, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন ধরনের অভিযোগ আসেনি। ভোলা সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহিন ফকির বলে এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেননি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।