লঞ্চ ধর্মঘটে বিচ্ছিন্ন ভোলা, যাত্রীদের দুর্ভোগ

আফজাল হোসেন ॥ নৌ-যান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ১০ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ভোলায় লঞ্চ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। এতে করে সারা দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দ্বীপজেলাটি। ধর্মঘটের কারণে রোববার (২৭ নভেম্বর) ঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
জানা গেছে, ভোলার সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম নৌ-পথ। কিন্তু ধর্মঘটে লঞ্চ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-ঢাকা রুটসহ অভ্যন্তরীণ রুটেও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে জেলার নৌ-যান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ।
সারাদেশের চলা ধর্মঘটে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে দ্বীপজেলা ভোলার মানুষ। বিচ্ছিন্ন জেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নৌযান। তাই জীবনের ঝুকি নিয়ে ছোট ট্রলার ও স্প্রিডবোডে করেই পাড়ি দিতে হচ্ছে মেঘনা এবং তেঁতুলিয়া নদী। শনিবার ২৬ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে সারাদেশের সাথে ভোলার নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জেলার প্রায় ২২লাখ মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দেশের মুল ভূখন্ড থেকে। সরাসরি সড়ক পথে কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই দ্বীপ জেলার ভোলার সাথে।
সরেজমিন ভোলার ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ভোন্তির চিত্র। মো: আলী এসেছেন তার অসুস্থ মাকে নিয়ে। উন্নত চিকিৎসা করাতে তাকে দ্রুত বরিশাল যেতেই হবে। লঞ্চ বন্ধ কোন উপায় না পেয়ে অসহায় এই মানুষটি। শেষ পর্যন্ত ছোট ট্রলারে করেই অসুস্থ মাকে নিয়ে রওনা করতে হয়েছে।


বিপাকে পড়েছে মেহেরপুর যাওয়ার আরেক যাত্রী মো: আশরাফ। সর্ব দক্ষিণ চরফ্যাশন থেকে কোন মতে ভোলার ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটে পর্যন্ত এসেছে। এখন লঞ্চ বন্দ তাই ট্রলারেই যেতে হবে। তার উপর টাকা যা ছিলো তার বেশির ভাগ শেষ। তাই ক্ষোভটাও বেশি। বল্লেন, সরকার সাধারণ মানুষদের নিয়ে চিন্তা করে না, চিন্তা করলে আমাদের ভোগান্তি উপলব্ধি করতেন। মুখে বল্লেও তিনি সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন না এবং চিন্তাও করেন না। যাতে অসহায় মানুষদের ভোগান্তি কম হয়, সেই চিন্তা করার দাবী প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার।
ঝালকাঠী যাবেন অসহায় মা বেগম ফরমুজুল হক। লঞ্চঘাটে এসেই চোখ কপালে উঠে গেছে। নবজাতক শিশু নিয়ে কিভাবে ট্রলারে যাবেন এইচিন্তা করেই। নিরুপায় এই মা নবজাতক শিশুকেই নিয়ে শেষ পর্যন্ত ট্রলারেই উঠেছে। এভাবে একাধিক রোগী আসছে আর যাচ্ছে বরিশালে। ভোলায় ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকা আর ডাক্তারদের হাসপাতালে না পেয়ে এসব রোগিরা বরিশালমুখী হচ্ছে বলে জানালেন মাথায় আঘাত পাওয়া এক রেগী। এছাড়া লঞ্চ ও স্প্রিডবোড ঘাটে চরম হয়রানীর স্বিকার হচ্ছে যাত্রীরা। একদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আর অপরদিকে ঘাটে হয়রানী, সবকিছু মিলিয়ে চরম ভোগান্তির স্বীকার ভোলার মানুষেরা।
নৌ-যান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা শেখ আবুল হাসেম বলেন, ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।