মধ্যরাত : পর্ব-১১২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : সকালে দোলাকে বললাম, ক্লাশে যাচ্ছত ? দোলা বলল, যেদিন ক্লাশ থাকে যাইত। দেখ পড়াশুনা নষ্ট করে দিওনা। মিয়ম মত ক্লাশ করো। আমার ইউনিভার্সিটি বন্ধ ছিল। একটু বাইরে বন্ধু-বান্ধবদের কাছে যেতে কেন জানি মন চাইত। রাহাত খানের ওখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম। রাহাত খান খবরের কাগজের উপর উপুর হয়ে কি একটা জরুরী নিউজ দেখছিলেন। আমি গিয়ে নমস্কার বিনিময় করলাম। তারপর বললাম, দাদা কেমন আছেন ? মিস্টার খান বললেন, আরে গরীবের দুয়ারে হাতির পারা, সেকি ? হঠাৎ বলা নেই, কওয়া নেই- স্ব-শরীওে প্রশান্ত বাবু এসে হাজির। কি ব্যাপার নাতনীর বিয়ে নাকি ? আমি বললাম, আরে না না এমনিই। আপনাকে কতদিন দেখিনা, তাই ভাবলাম একটু খোজ নিয়ে আসি।
মিস্টার খান বললেন, তা দাদা গান-বাজনা আপনি একা একাই শোনেন ? না আর কেহর শোনার অধিকার রাখেন। শুনলাম কঙ্ক্রোডিয়ার প্রফেসাররা খালি শোনার যোগ্যতা রাখে, আর কোন কলেজের প্রফেসাররা কি শোনার যোগ্যতা রাখে না ? আমি বললাম, এ সব কথা বলছেন কেন ? আরে দাদা আপনি বাড়ীতে প্রফেসারদের নিমন্ত্রণ করে সামান্য কিছু খানা-পিনা করিয়েছেন। গান-বাজনা হল, আর আমরা কি দোষ কলাম। আমি বললাম, আমার এক বন্ধুর ভাই এসেছেন। ও কিছু গান-বাজনা জানে। আমার কঙ্ক্রোডিয়ার বন্ধু-বান্ধবরা এসেছিল আর কেউনা। আর তা ছাড়া তারা নিজেরাই বৌ-বাচ্চাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া তৈরী করে অনেক অনেক ফুল নিয়ে এসেছিল। আমিত বিয়ে সাদী করিনি, আমার বাড়ীতে যন্ত কারার লোকের খুব অভাব। কাউকে সে জন্য আমি নিজ থেকে ডাকিনা। কেউ যদি আবদার করে আপন মনে করে, নিজ থেকে আসে আমি খুশী মনে গ্রহণ করি। মিষ্টার খান আমার কথাগুলি খুব মনযোগ দিয়ে শুনছিলেন। ভদ্রলোক বুদ্ধিমান ধীর স্থির বিনয়ী। ওনিও এখনও পরিবার পরিজন কাছে আনেননি। তবে শুনেছি শীঘ্ররই এসে পরবে। আমাকে চা খেতে বলল। আমি বললাম, না এখন কিছু খাব না। রাহাত খান বললেন, তা আসবেন মাঝে মধ্যে। আমি বললাম, তা নিশ্চয়।
বাসায় এসে দেখি দোলা, কচ, বৌদি দুপুরের লাঞ্চ শেষ করে, গল্প গুজবে ব্যস্ত। দোলা আমাকে দেখে বলল, দাদু কোথায় গিয়েছিলে ? এখনও তোমার খাওয়া-দাওয়া হয়নি, ¯œান হয়নি, এস ¯œান কর, খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম করো। আমি ¯œান সেরে খেয়ে একটু শুয়ে কাগজটা দেখছিলাম। বৌদি এসে কাছে বসে বলল, প্রশান্ত বাবু আমরা একটু অটোয়া, কুইবেক যেতে চাই। আমি বললাম, যাবেন ? ভাল। বৌদি বলল, দোলা যাবে আমার সাথে। ও গেলে গল্পে গুজবে বেশ চলে যাবে পথের ক্লান্তিগুলি। আমি বললাম, দোলাকে জিজ্ঞাসা করুন, ওর কি মতামত। আমার তরফ থেকে কোন আপত্তি নেই। বৌদি বলল, আমি ওকে বলেছি, ওর অমত নেই। যদি আপনি অনুমতি দেন।
আমি চুপ করে ভাবতে লাগলাম, জিনিসটা কতটুকু গড়িয়ে যাবে। আমি বললাম, কখন যেতে চান, কোনদিন ? বলল, আগামী দিন। অটোয়া একদিন থাকব, কচ এর বন্ধুর বাসায়। অটোয়া দুদিন থাকার জন্য ওর বন্ধু খুবই প্রসাদ। খুব ওকে পিড়াপিড়ি করছিল, কিন্তু কচ রাজি হয়নি। ওর বন্ধু পতœী খুব ভাল মেয়ে। কুইবেকে আমরা দু’দিন থাকব। সেখানে আমার ছেলৈ বেলার এক বান্ধবী আছে। ওর স্বামী লাভাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসার। ওর দু ছেলে, ছোট একটি মেয়ে। ওরা অনেক দিন পর্যন্ত বলছিল একটু বেড়াতে যাবার জন্য। এই কুসুমের বিয়ে, কচ এর পরীক্ষার জন্য আমরা দেরী করলাম। আমরা এখন নিশ্চিন্ত। তাই ওখান থেকে ঘুরে এসেই আমরা কিন্তু টরেন্টোর পথে পাড়ি জমাব। ওর দাদাকে রেখে এসেছি, কি খাচ্ছে না খাচ্ছে। আমরা সেরকম মোটেও ইচ্ছে ছিল না। কচ এর দাদাই বললেন, মাধুরী কচকে নিয়ে একটু ঘুরে এস। বেচারা কচ ঘরে বসে বসে এতদিন ঘর কুনো হয়ে পড়া শুনোয় ব্যস্ত রয়েছে। এখন একটু ঘুরুক। আর জানেন, কচ এর দাদা খুব ভাই-বোন ভক্ত।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।