মধ্যরাত : পর্ব-১১১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : তারপর কচ বেহালাটা হাতে নিল। বেহালাটা একটা আর্তনাদের মত সকলের হৃদয়কে সুর তুলে তুলে স্তম্ভিত করে ফেলল। সেই সুরের নেশায় সকলে ঝিমুতে লাগল। কচ বাজাল তুমি কি এখন দেখেছ স্বপন আমারে— গানটা যেন কেঁদে কেঁদে সকলের চোখ জল এনেছিল। আমি যেন বলতে চাইলাম ওগো থামাও থামাও তোমার এই প্রাণ উতলা করা মোহন সুর। সকলে আবার বলল আর একটা। আমি বললাম ঐ টা বাজাও-

জীবনে যদি দ্বীপ জ্বালাতে নাহি পার
মোর সমাধির পরে জ্বেলে দিও-

কচ অনেকক্ষণ ধরে গীটারে সুরটা তুলে নিয়ে আঙ্গুলগুলি দ্রুত তালে তালে চালাতে লাগল। সে সুরের কাতর মিনতি ভরা শব্দ গুলু আকাশ বাতাশ মথিত করে তুলে আকাশের অসংখ্য তারাও যেন বলতে লাগল। মোর সমাধির পরে জ্বেলে দিও। শুল্ক পক্ষের ক্ষীণ চাঁদ যেন এ ধরার বুকে নেমে এল, কচ এর হৃদয় কাতর করা মন দুলে উঠা গান শ্রবন করার জন্য।
সকলেই কচ এর খুব প্রসস্তি গাইতে লাগল। এত সুন্দর বাজাও, যেন হৃদয় পাগল করে। সুশীল, ভবতোষ, অমিয়, বিজন ওরা গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপগুলি কচ এর হাতে তুলে দিল। কচ সম্ভ্রমে ফুলগুলি কপালে ছোঁয়াল। শ্যামল এতক্ষণ চুক করেছিল। বলল, আমি ধন্যবাদ দেবার ভাষাও ভুলে গেছি। আমি ভাবতে পারিনি এত সুন্দর বাজায়। দোলা ঘরে ছিল বড়দিদিদের সাথে বাজনা শুনছিল। বউদিরা খুব সুখ্যাতি করল। সকলেই একে একে বাড়ী ফিরার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল। রাত প্রায় ১টার কাছে, বাচ্চারা এতক্ষণ চুপ করে এ বাজনা শুনেছে। আশ্চর্য্য কেউ সোর গোল করেনি। সকল বাচ্চারাই বাজনা শুনে শুনে ঘুমিয়ে পরেছে।
সকলের সাথেই গাড়ী ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ী ঘর শূণ্য হয়ে গেল। কচ উঠে কাপর চোপড় পরিবর্তণ করে বিছানায় গেল। বৌদি ঘুমাতে গেল, শুধু দোলা বেলকুনীতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। এতক্ষণ দোলা যেন মন্ত্রমুগ্ধের মত পর পর কচ এর বাজনাগুলি হৃদয়ের কাছে হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছে। সবগুলি গানই যেন হৃদয়কে কাঁদায়। তবু দোলা উদার আকাশের দিকে চেয়ে প্রশ্ন রাখে অনন্ত আকাশের কোনে শুল্কপক্ষে ক্ষীণ চাঁদ টাকে। একখানা সপ্তর্ষি অনন্ত প্রশ্নের দোলাকে ঘিরে আছে। আমিও বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। কচ কতক্ষণ এ পাশ, ওপাশ করে উঠে বারান্দায় গেল। কি যেন শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। চেয়ে দেখলাম কচ ঘরে নেই। ভাবলাম গরমে বোধ হয় বেলকুনিতে দাঁড়িয়েছে। সারারাত গরমে আমার ভাল ঘুম হয়নি, কিন্তু কচ বেলকুনিতে ছিল। খুব ভোরের ফর্সা হয় হয় এমন সময় ও এসে বিছানায় আশ্রয় নিল। আমি না দেখার ভান করে শুয়ে থাকলাম।

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।