দেড় মাসেও উদঘাটন হয়নি চরফ্যাশনের শিশু নাজমুলের মৃত্যুর রহস্য

বাবা সবুজ দিদার মায়ের সাথে অভিমান করে ২০১৮ সালে আত্মহত্যা করেন। এরপর কয়েক মাস শিশু নাজমুল তার দাদার বাড়ী ঢাকা ধামরাই এলাকায় থাকেন। বাবা মৃত্যুর কয়েক মাস পর নাজমুলের চাচা সোহেল দিদার তার মা নাসরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। ভাইয়ের মৃত্যুর পর দুই ভাতিজার দিকে তাকিয়ে বড় ভাবিকে সোহেল বিয়ে করলেও ভাবি নাসরিনের বেপরোয়া চলাফেরায় শেষ পর্যন্ত সোহেল ও নাসরিনের সংসার ইতি টানতে হয়েছে। সংসার বিচ্ছেদের পর আবার অন্যত্রে বিয়ে করেন নাসরিন। মা নাসরিনের বিয়ের পর নানা বাড়ীতে অযতেœ অবহেলায় বসবাস করেন নাজমুল ও তার ছোট ভাই নাহিদ। দুই নাতির কষ্ট দেখে নাজমুলের দাদা আবদুর রব দিদার বারবার নিজের নাতিদের নিজের কাছে নেওয়ার চেষ্টা করেও নাসরিনের বাবা বাড়ী চরফ্যাশন উপজেলার চর মাদ্রাজ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে চরনাজিমুদ্দিনে এসে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হয়ে যার যার মত চলাফেরা করতে থাকে। এর মধ্যে নাজমুলকে তার মা নাসরিন চরফ্যাশন উপজেলা চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের একটি কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়ে তিনি তৃতীয় স্বামীর বাড়ীতে সংসার করেন। এর মধ্যে গত ১৩/১০/২০২২ দুপুরে হঠাৎ নাজমুল তার নানা বাড়ীতে গলায় ফাঁস দিয়েছে এমন একটি খবর পেয়েছে নাজমুলের দাদা এবং চাচা কিন্তু তারা আসার আগেই নাজমুল কে পোস্টমর্টেম করে দাফনের জন্য প্রস্তুত করেন নাজমুলের নানা বাড়ীর স্বজনরা। শেষ বারের মত নিজের নাতিকে দেখতে দেওয়া হইনি নাজমুলের দাদা দাদীকে এমন অভিযোগ করেছেন তারা। মাত্র ১২ বছরের শিশু গলায় ফাঁস দিয়েছে ? নাকি তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে থাকলেও চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের নজরুল মেম্বারের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাইনি কেউ। এমনটাই জানিয়েছে নাজমুলের চাচা সোহেল দিদার।
এদিকে শিশু নাজমুলের মৃত্যু রহস্যময় এমন খবর চরফ্যাশনের বাতাসে উড়লেও প্রভাবশালী নজরুল মেম্বারের কাছে যে জিম্মি ছিলো সব। শিশুর দাদা বাড়ীর স্বজনরা না আসতেই পোস্টমর্টেম থেকে শুরু করে সকল যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেন তারা।
নাজমুলের চাচা সোহেল দিদার বলেন, আমার ছোট ভাতিজা আত্মহত্যা করতে পারে না, ওর নানা বাড়ীর লোকজনের অমানবিক নির্যাতনে মারা গেছে। আর যদি আত্মহত্যা করলেও থাকে তা হলে তাদের অযতেœ অবহেলায় আত্মহত্যা করেছে।
সোহেল দিদার আরো বলেন, আমার বড় ভাতিজার মৃত্যুর পর আমার ছোট ভাতিজাকে আমরা নিতে চাইলে আমার বাবা মাকে নজরুল মেম্বার তার নিজের ঘরে রাতভর আটকিয়ে রেখে ২০ হাজার টাকা রেখে দিয়েছে কিন্তু আমার ভাতিজাকে দেইনি।
এদিকে প্রায় দেড় মাস গত হলেও আমার ভাতিজা কি ভাবে মারা গেলো, কেনো মারা গেছে এই রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি প্রশাসন। আমরা বারবার থানায় যোগাযোগ করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি বলেও জানান সোহেল।
এই বিষয়ে নাজমুলের মা নাসরিন বেগমের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার বাবা সাবের মাঝির মোবাইলে কল দিলে অন্য একজন রিসিভ করে বলেন মোবাইল চার্জে রয়েছে। তবে যার কাছে নাজমুল ছিলো এবং যিনি প্রথম দেখেছে নাজমুল ঝুলছে নাজমুলের সেই মামানি আকলিমা বলেন, নাজমুল আমার কাছেই ছিলো, তবে কেনো মারা গেছে জানিনা। কিন্তু নাজমুলের মা ঢাকা থেকে আসবে এমন খবর শুনে আমি নাজমুলকে বলেছি যে তোমার আম্মু আসবে। আমার কাছে মা আসার কথা শুনে খুশি না হয়ে মুখটা বেজার করে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে আর যেদিন নাজমুলের মা ঢাকা থেকে লঞ্চে উঠেছে সেদিনই নাজমুল এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে নজরুল মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নাজমুলের লাশ উদ্ধারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি ছিলাম। তবে মুরুব্বিদের থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। এমনেই আমার বাসায় বসে রাতে আলোচনা হয়েছে।
চরফ্যাশন থানার এসআই রাসেল জানান, খবর পেয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় আমরা নাজমুলের লাশ উদ্ধার করেছি। মৃত্যুর সঠিক কারন নিশ্চিত করার জন্য পোস্টমর্টেম করা হয়েছে তবে রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। রিপোর্ট আসলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।