মধ্যরাত : পর্ব-১০৯
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)
(গত পর্বের পর) : ভবতোষ সকলকে টেবিলে আসার জন্য ডাকছিল। আমরা সকলেই এক সাথে যেতে চাইলাম। দোলা বলল, দাদু তোমরা খাও। আমরা মেয়েরা পরে খাব। দোলাই সকলকে পরিবেশ করছিল। বৌদিও হাত থেকে সব খাবার নিয়ে টেবিলে রেখে সকলকে পাতে তুলে তুলে দিল। শ্যামল, কচ দু’জনেই চুপ-চাপ হয়ে খেয়ে যাচ্ছিল। ভবতোষ বলছিল, এই মন্ট্রিলের গল্প প্রায় উইক এন্ড ডেতে, সব দাদাদের কারো না কারো বাড়ীতে নিমন্ত্রণ থাকেই, মন্ট্রিলে এই একটা বৈশিষ্ট।
প্রশান্ত বলল, টরেন্টোয় ঐ রকম দেখছিলাম। আর বাঙ্গালীরা কি করবে, ঐরকম করেই তারা সকলে সকলের সাথে মেলা মেশার সুযোগ লাভ করে। একটু আনন্দও পায়। দুটো দুঃখ-সুখের কথা, বা দেশের ভাল-মন্দ টুকি-টাকী রাজনীতি নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করেন। বা কেহ কেহ খাইয়ে-দাইয়ে নাম কিনতে চান। অনেক লোক জ্ঞান-গুন, কর্ম ব্যস্ততার মাধ্যমে সকলের সাথে পরিচিত হন, বা কেহ কেহ মানুষকে পোলাও-কোরমা, কারি, মাংস, কাবাব, কেক, পুডিং অনলম, পরিশ্রম করে তৈরী করে আট-দশ দিন পর্যন্ত ফোন করে করে তাদের নিমন্ত্রণ করে ডেকে আনেন।
এই রেওয়াজটা মন্ট্রিলের বুকেই বেশী চলছে। কিন্তু ঢাকায় বা অন্যান্য জায়গায় এরকম নেই বললেই চলে। শুধু বিয়ে, অন্ন প্রশান, বা আকিকা, মুখে ভাত, বা মুসলমানি এসবেতে ঢাকায় বিরাট আকারে গেট সাজিয়ে, মাইক বাজিয়ে ছেলেকে সাজিয়ে রাস্তায় ঘুরিয়ে প্রচার করে। খেতে খেতে গল্প গুজবে বেশ রাত হল। এবার মেয়েরা খেতে বসার পালা। দোলা বলল, বৌদি আসুন আমরা এক সাথেই খেতে বসি। যার যা ইচ্ছে নিয়ে খাবে। দোলা বলল, জানেন বৌদি আমার দিদিমা যা ভাল রাঁধতে পারে। আপনারা খেলে আর ভুলবেন না। বাবা কাউকে নিমন্ত্রণ করলে মা সব কেটে কুটে গুছিয়ে ধুয়ে, দিদিমাকে তৈরী করে সামনে এগিয়ে দেন। দিদিমা’র হাতে কি মধু আছে না কি জানিনা। সবাই খেয়ে বলে অমৃত। সত্যি মসল্লাগুলি এমনি আন্দাজ করে দেন, আমি আজ পর্যন্তও দিদিমার গুন আয়ত্ব করতে পারিনি।
আমরা দিদিমার গুনের জন্য সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করি। বাবা-মা আমরা ভাই-বোনেরা সকলেই দিদিমাকে ভীষণ ভালবাসি। শুধু রান্না-বান্না ? গল্প করতে বলেন সে হাজার রাতের রাজা-বাদশা, যাদুকর, ভুর-পেতনীর গল্প সে রাতের পর রাত অনর্গল বলে আপনাকে বশীভূত করে রাখবে। বরিশালে আমাদের একটি সুপারির বাগান ছিল। ছোট বেলা যখন গাড়ী করে ঐ পথ দিয়ে যেতাম গাড়ী ছুটে চলেছে, ঐ বাগান আর শেষ হয়না। বাবাকে বলতাম, বাবা এ বাগানটা কার ? বাবা বলতেন, আমার মায়ের হাতের। আমরা অবাক হয়ে ভাবতাম কেমন করে, কি রকম ভাবে মানুষ এত বড় সুপারির বাগান বানায় ? তা মেয়ে মানুষে ? বাবা বলতেন, দুপরে না ঘুমিয়ে মা একখানা দাও হাতে করে ঐ বাগানে গিয়ে সুপারির চারা লাগাতেন। আমরা রূপকথার রাজ পুত্রের গল্পের মত বাবার মুখ থেকে দিদিমার গুনের অপূর্ব রূপকথা শুনতাম।
গল্প করতে করতে সেদিন দোলা যেন খেই হারিয়ে ফেলছিল। আমি ড্রইং রুম থেকে ডাক দিলাম, দোলা অনেক রাত হলরে। দোলা বলল, দাদু এইত মাত্র খেয়ে উঠলাম, একটু বস আমরা আসছি। কচ, শ্যামল দু’জনেও অনেক গল্প করল। কচ বলল, শ্যামল বাবু কাল আসছেনত ? শ্যামল বলল, আমাকে যেতে হবে নাকি ? কালত জামাই বাবুর প্রফেসারদের দাদুর বাড়ীতে কি খাওয়া-দাওয়া, গান বাজনা হবে শুনলাম। শ্যামল বলল, আর তা ছাড়া আমি গান-বাজনা, দু’টোর একটাও জানিনা। কচ বলল, সকলেই যদি গান গায়, মিউজিক বাজান তবে শুনবে কে ? সমজদারদেরও দরকার ? কচ বলল, নিশ্চয় আপনি গান-বাজনার মত বড় অনুরাগী। শ্যামল বলল, তা একটু-আধটু আছি বৈকি।
(চলবে———–)