মধ্যরাত : পর্ব-১০৬
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : হঠাৎ ভবতোষ বাবু বলল, আরে ভাই আমাদের প্রশান্ত বাবু এখন গানের সাগরে ভাসছেন। সকলেই এক বাক্যে আবার কি রকম ? সকলেই আমার মুখ থেকে শুনতে চায়। আমি বললাম, আমার এক বন্ধুর ভাই থিসিস সাবমিট করে কিছু দিনের জন্য মন্ট্রিল, অটোয়া, কুইবেক ঘোরার জন্য এসেছে। সে একটু গীটার বাজাতে জানে। মাঝে মধ্যে আমাকে একটু আধটু বাজিয়ে শোনায়। ওকি গীটার সাথে করে এনেছে ? আমি বললাম, আমিই একটা কিনে নিলাম। ওর বাজনাও শোনা যাবে, আর আমার একাকীত্ত্ব ভাবটা একটু কমবে।
ভবতোষ বলল, কেন আপনার নাতনী বাজনা শিখতে পারবে। আমি বললাম, তা যদি দোলার শেখার আগ্রহ থাকে শিখলেত ভালই হবে। আর ওর বা সময় কোথায় ? ওর এম.এস. করছে। ওকেত এম.এস. ক্লাশ করার জন্য ইউনিভার্সিটিতে আসতে হচ্ছে। অমিয় বলল, তাহলে ওনাকে রেঁধে-বেড়ে খাওয়ায় কে ? আমি বললাম, সাথে করে বৌদিকে নিয়ে এসেছে। সুশীল বলল, ছেলেটি শুনেছি নাকি খুবই ব্রিলিয়ান্ট ? আমি বললাম, শুনছিত।
অমিয়, ভবতোষ, সুশীল সকলেই একাসাথে বলে উঠল- প্রশান্ত বাবু আপনার ভাগ্য খুব ভাল। আপনার একাকীত্ত্ব কমবে, তার মধ্যে মাঝে মাঝে গীটারের বাজনা সুমধুর সুর আপনার কর্ণ কুহরে প্রবেশ করে। ওরা বলল, তা প্রশান্ত বাবু আপনি একা একাই মিউজিক শুনবেন ? আমরাত একাবার শোনার জন্য আপনার কাছে দাবী রাখি। আমি বললাম, তা বেশত। আসুন না আমার এপার্টমেন্টে, গান শুনবেন। অমিয় তা একটু নিমন্ত্রণ করলে, গরম গরম পোলাও, মাংস, লুচি, মিষ্টি খাব আর গান বাজনা শুনব। খালি মুখে, খালি পেটে কোন কিছুই জমেনা। আমি বললাম, সামনের উইকেন ডেতে রবিবার বিকেলে আপনারা আসেন। আমাদের বউরা আবার কি দোষ করল ? তাকেত আপনি ফাঁক তালে বাদ গিয়ে যাচ্ছেন। আমি বললাম, আমার নিজের বৌ নেই বলে আমি সকলের বৌ-ঝিদের কথা মাঝে মাঝে একদম ভুলে যাই। এ জন্য আশা করি আপনারা আমার দোষ নেবেন না।
তা আপনাদের সকলের বৌদিকে আমি নিমন্ত্রণ জানালাম। আমারও সেরকম রান্না করার লোক নেই মন্ট্রিলে, নাতনী ছেলে মানুষ ও পড়াশুনা নিয়েই ব্যস্ত তা বৌদিরা নিজেই ভালমন্দ তৈরী করে খাবেন ? অমিয় সুশীল বলল, তা আমরা সেদিন বাড়ীতে বলে দিব। আমাদের বউরা প্রত্যেকে একটা করে খাবার তৈরী করে আপনার বাড়ী নিয়ে গিয়ে সকলেই এক সঙ্গে হৈ-চৈ করে খেয়ে গান বাজনা শুনে আসব। সকলেই বলল, চমৎকার প্রস্তাব। প্রশান্ত বাবুর কেউ নেই, নাতনী ছেলৈ মানুষ। ওনার নাতনী, আমাদের নাতনী। তাকে রান্না-বান্না করার ভার দিয়ে, আমরা বেচারীকে হাঙ্গামায় ফেলতে চাইনা।
বন্ধুদের কথায় যেন আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। আমার অসুবিধাটা সকলেই নিজেদের অসুবিধা বলে গ্রহণ করেছে। এটা একটি আপনতার পরিচয়। আমি ওদের বলব, দোলাকে কি কিছু তৈরী করতে বলব ? সকলেই একবাক্যে বলল, আপনারা আমাদের গেষ্ট। সেদিনের মত সেখানেই কথা-বার্তা শেষ করে আমি বাড়ী চলে এলাম। বাড়ী এসে বিশ্রাম করে বিকালের দিকে আমি বাইরে বেড়াতে গেলাম।
(চলবে——-)