সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-৯৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : রাতের বেলা যখন মধ্য রাতের প্রহর ঘোষণা করে, আমার মনে হয় আমার দুয়ারে যেন কোন অন্ধ, খোঁড়া, রিক্ত, নিঃস্ব, অসহায় পৃথিবীর সব রঞ্চিত মানুষেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। রাত হয় বলে আমি ওদের কাছে আসতে পারিনা। রাতের সেই সাগর পাড়ি দিয়ে, সেই মহা সমুদ্রের কুল ভেঙ্গে মুসাফিরদের কাছে ঘেসতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। এত ঢেউ, সেই ঢেউয়ের মাঝে আমি তলিয়ে গিয়ে হাবু ডুবু খাই। মধ্য রাতের সেই তারাগুলিও যেন আমার মত অসহায় হয়ে পৃথিবীর বুকে নিরপরাধের মত চেয়ে থাকে। তারা যেন চুপি চুপি আমাকে বলে ওগো মধ্য রাতের যাদুকর, তোমার যাদুর ছোঁয়ায় রাতের পাহারা থেকে দিনের আলোয় নিয়ে যাও আমাদের। আমরা যে পৃথিবীর জন্ম জন্মান্তর থেকৈ এই রাতে মধ্যরাতে নির্ভিক প্রহরীর মত, এই বসুন্ধরাকে আগলিয়ে রাখতে রাখতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে, নিশাচর পাখির মত প্রহর ঘোষণা করে চলেছি।
ভোর হয়ে এল, প্রভাতের ¯িœগ্ধ রূপসুধা সুন্দর পাখির কলগানে সূর্য্যরাগের উপর ছায় দিয়ে, সরষে ফুলে ক্ষেত বাসন্তী রংয়ের সুপ্রভাত ঘোষণা করল। আমার যেন চোখ দুটো একটু বুজে আসতে চাইল। বিছানায় এসে পাশ বালিশটা বুকে নিয়ে একটু শুয়ে পরলাম। হঠাৎ দোলার ডাকে চোখ খুলে গেল। দাদু কত বেলা হয়েছে, তুমি এখনও ঘুমিয়ে ? আমি বললাম রাতে-ত মোটেই ঘুম হয় না। এই ভোরে একটু শুয়ে ছিলাম। তাড়াতাড়ি উঠে ইউনিভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরী হতে লাগলাম। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে উঠলাম। ইউনির্ভাসিটিতে নামলাম। আসতে আসতে টাইম একটু ওভার হয়ে গিয়েছিল। তবুও সেদিন ক্লাশ ছিল তাড়াতাড়ি ক্লাশে ঢুকে পরলাম। ছাত্রদের পড়িয়ে কমনরুমে এসে বসলাম। কমনরুমে সেদিন প্রফেসারদের ভিড় দেখলাম।
রাজনীতির বিরাট আলোচনা চলছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এখানে (মন্ট্রিলে) পাকিস্তানীরা পাকিস্তান দিবস পালন করেছিল। তখন বাংলাদেশের প্রবাসী প্রফেসাররা নামকরা অনেক যারা এখন কম্বোডিয়া, ম্যাগগিলে আছেন; তারা যোগদান করেছিলেন। টিপু সুলতান, ডাঃ মালেক নাকি এ ব্যাপারে ভীষণ আপত্তি জানিয়েছিলেন তারা শুনেনি। তবুও তারা তাতে ঐ ফাংশনে যোগদান করে অনুষ্ঠান অনুভব করেছেন। আশ্চর্য্য, ভাবতে বিস্ময় বোধ হয়, বাঙ্গালী যদি বাঙ্গালী চৈতন্যতা না থাকে তবে সে কিসের বাঙ্গালী ? ডাঃ মালেক, ইঞ্জিনিয়ার টিপু সুলতান, আপত্তি করল পাকিস্তানীর পাকিস্তান দিবসের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার জন্য। তবু বাঙ্গালী গেল ? এইত মাস কয়েক আগেই-ত পাকিস্তানিরা আমাদের বাংলাদেশে মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করেছে। লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে। আলবদর, রাজাকার তৈরী করে বাংলাদেশের নাম করা বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করিয়েছে। মনে হয় ৬০-৭০ বছরেও বাংলাদেশে এরকম নামকরা বুদ্ধিজীবি তৈরী হবে কি না সন্দেহ।
রাব্বির মত এরকম একজন ডাক্তার আর বাংলাদেশের বুকে আসবে না। রোগীকে দেখলেই বলে দিতে পারত কি রোগ। গরীবের প্রতি ছিল তার অপরিসীম দরদ। একদিন একটা ব্যাপার আমি স্ব-চক্ষে দর্শন করলাম। রাব্বির কাছে পেসেন্ট হয়ে যাওয়ায় আমারও একদিন সৌভাগ্য হয়েছিল। দেখলাম তার চেম্বারে রোগীতে ভরপুর। তিল ধরনের জায়গা নেই।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।