সময়কাল বেড়েছে বজ্রপাতের

বজ্রমেঘ ঘনঘটার সময় বলা হয় এপ্রিল থেকে জুন মাস। তবে কয়েক বছর ধরে এই সময়কাল আরো বেড়েছে। বর্তমানে মেঘ থেকে মাটিতে বজ্রপাত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেও হচ্ছে। ফলে অসময়ে বজ্রপাতের মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য প্রয়োজন অধিকহারে প্রচার এবং সচেতনতা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বজ্রপাত তিন ধরণের হয়। মেঘ থেকে মেঘে। মেঘ থেকে বাতাসে এবং মেঘ থেকে ভূমিতে। গত কয়েক বছর ধরে মেঘ মাটিতে বজ্রপাত লম্বা সময় ধরে হচ্ছে। ফলে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বাড়ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। এক্ষেত্রে ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০জন, ২০১৫ সালে ২২৬ জন, ২০১৬ সালে ৩৯১ জন, ২০১৭ সালে ৩০১৭জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৯৮ জন, ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৫৫ জন ও ২০২১ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩১৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
চলতি বছরও এপ্রিল থেকে প্রতি মাসেই বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। চলতি সেপ্টেম্বরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২ জন নিহত হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে উল্লাপাড়া উপজেলায় বজ্রপাতে এক পরিবারের তিনজনসহ ৯ জন মারা গেছেন।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার পঞ্চকষি ইউনিয়নের মাটিকোড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। উল্লাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত বা নিহতের মধ্যে যারা বাইরে কাজে যাচ্ছেন অর্থাৎ যারা মাঠে বেশি অবস্থান করছেন তাদের সংখ্যাই বেশি। এর পেছনে বড় বড় গাছ না থাককেই মূলত দায়ী করা হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বজ্রপাত আগেও হয়েছে এখনো হচ্ছে। তবে এখন বেশি মৃত্যু হওয়ার পেছনে দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন এবং অসচেতনতা।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান বলেন, এপ্রিল থেকে জুন মাস বজ্রপাতের সময় হলেও এখন সেটা বেড়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অর্থাৎ বর্ষা আগে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকতো। এখন মধ্য অক্টোবরের আগে বর্ষা বিদায় নেয় না। আর বর্ষার পুরো সময়টা ধরেই বজ্রপাত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে। তিনি বলেন, বজ্রপাত ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার ও সচেতনতা। গণমাধ্যমকেও ভূমিকা নেওয়া উচিত।
এদিকে বজ্রপাতে হটস্পট বলা হচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চল। বিশেষ করে মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা এসব অঞ্চলে এবং জামালপুর, সিরাজগঞ্জসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। আবাহওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, বজ্রপাতের অন্যতম কারণ হচ্ছে তাপপ্রবাহ ও পশ্চিমা লঘুচাপের মিশ্রণ। অর্থাৎ দক্ষিণের গরম বাতাস আর পশ্চিমা লঘুচাপের মিশ্রণের কারণে প্রচুর বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। মেঘের মধ্যে থাকা ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের গঠন ও পরিবহনের ফলে বজ্রপাত হয়।
কারো উপর বজ্রপাত হলে, সেটা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে বজ্রপাত যাতে এড়িয়ে চলা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বজ্রপাত নিরোধক দ- স্থাপন মৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে খোলা মাঠে কিংবা ভবনের ছাদে বজ্র নিরোধক দ- স্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার এর আগে তালগাছ লাগানোর কর্মসূচি হাতে নিলেও বর্তমানে মৃত্যু হার বাড়ায় পরিকল্পনা নিয়েছে বজ্রনিরোধক দ- স্থাপনের। এক্ষেত্রে হাওড় অঞ্চলকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া জাতীয় বিল্ডিং কোডে বজ্রপাত নিরোধক দ- বসানো বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এ নিয়ে প্রচারও চালাচ্ছে। তারা লিফলেটও বিলি করছে। এক্ষেত্রে বজ্রপাতের সময় বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা প্রচার চালাচ্ছে।
বজ্রপাত থেকে রেহাই পেতে আকাশে মেঘ দেখা গেলে ঘরে অবস্থান করা, দ্রুত দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেওয়া, জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় না থাকা এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকা, ঘন-কালো মেঘ দেখা গেলে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হওয়া, উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, ধাতব খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার থেকে দুরে থাকা, বজ্রপাতের সময় জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করার জন্য বলা হচ্ছে।
এছাড়া খোলা জায়গা, মাঠ বা উঁচু স্থানে না থাকা, কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা, জলাশয় থেকে দূরে থাকা, বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে থাকলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়া, বজ্রপাতের সময় গাড়ির মধ্যে অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ না ঘটানো এবং সম্ভব হলে গাড়িটিকে নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেওয়া এবং বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সুত্র : বাংলানিউজ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।