টেনিসের কৃষ্ণকলি’র বিদায়

টেনিস যদি সাম্রাজ্য হয়, সেখানকার মহারানী সেরেনা উইলিয়ামস। হয়তো অনেকেই বলবেন সবচেয়ে বেশি একক গ্র্যান্ডস্ল্যাম তো মার্গারেট কোর্টের। না, এই একটা মাপকাঠিতে রানীর সিংহাসন চিহ্নিত করা যায় না। গত দুই দশকের বেশি সময় টেনিসের উঠোনটা যাঁর জন্য হয়েছিল বেশি রঙিন, মায়াবী; সেই তিনি আর কেউ নন- যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণকলি খ্যাত সেরোনাই। আনন্দ-বেদনার মাঝে অল্প সময়ে দর্শকমনে ঠাঁই করে নেন তিনি। দীর্ঘ ২৭ বছরে অসংখ্য প্রাপ্তির ঝলকানিতে সবাইকে করেন মুগ্ধ। অবশেষে মুগ্ধতার সমাপ্তি, ক্যারিয়ার-খাতার শেষ পৃষ্ঠায় দাঁড়িটা নিজ হাতেই দিলেন সেরেনা। গতকালের পর আর টেনিস-বাটে পড়বে না তাঁর পায়ের চিহ্ন।
যেখানে শুরু সেখানেই শেষ : ১৯৯৫; মাত্র ১৪ বছর বয়সে টেনিসের পেশাদার ট্রেনের যাত্রী হয়েছিলেন সেরেনা। দুই যুগের বেশি সময় ধরে যে ট্রেন ঘুরেছে টেনিসের বিভিন্ন স্টেশনে। এই সময়ে আরও অনেকেই হয়েছেন যাত্রী। কিন্তু কেউই সেরেনার মতো নন। প্রতি স্টেশনেই তাঁর জয়ধ্বনি শুনেছে মানুষ। ১৯৯৯, সেবার ঘরের কোর্টে নেমেই বাজিমাত করেন সেরেনা। জিতে নেন ইউএস ওপেনের শিরোপাটা। সেই যে শুরু, তার শেষ হলো গতকাল একই মঞ্চে হার দিয়ে। তবে এই হার সেরেনার জন্য আর দশটি হারের মতো ছিল না। এ যে বিদায়ের ঘণ্টামাত্র। প্রথম দুই রাউন্ডে জয় পাওয়ায় অপেক্ষা বাড়ে তাঁর। তৃতীয় রাউন্ডে শেষ হয় সেই অপেক্ষা। হয়তো বিধাতা তাঁর জন্য চিত্রনাট্যটা এভাবেই সাজিয়ে রেখেছিল।
দু’চোখে ছেড়ে যাওয়ার অশ্রু
কী কঠিন সংগ্রাম, শ্বেতাঙ্গের ভিড়ে আশির দশকে ফ্লোরিডায় জন্ম নেন সেরেনা। বড় বোন ভেনাসের হাত ধরে র‌্যাকেট চালানো শেখা, এর পর তাঁকেই টপকে যাওয়া; একসময় পুরো টেনিসবিশ্বের সম্রাজ্ঞী হওয়া। তাঁর এই পথটা মোটেও সহজ ছিল না। পদে পদে শুনতে হয়েছে নানা কথা। বর্ণবাদের কথার বুলেট কখনও ক্ষতবিক্ষত করেছে হৃদয়। তবু হাল ছাড়েননি, টেনিসের প্রতি যে ভালোবাসা নিয়ে এগিয়েছেন, দিন শেষে সেটিই তাঁকে বসিয়েছে সেরার আসনে। তাইতো যাবার বেলায় দু’চোখে তাঁর ছেড়ে যাওয়ার অশ্রু। মা-বাবা, বোন আর সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিলেন বিদায়, ‘সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আজকের সেরেনা হতে পারতাম না যদি ভেনাসের (বড় বোন) দেখা না পেতাম। ভেনাস তোমাকে ধন্যবাদ। তোমার জন্যই সেরেনার জন্ম। আর বাবা-মায়ের কারণে এসবের শুরু হয়েছিল। সব সাফল্য তাঁদেরই প্রাপ্য। বাবা, আমি জানি তুমিও দেখছ।’
২৭ বছরের বর্ণিল ক্যারিয়ার : কত রঙিন, কত ঝলমলে, কত-না আবেগ আর রোমাঞ্চে জড়ানো ছিল সেরেনার টেনিস জীবন। ১৯৯৫ সালে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে নামটা লিপিবদ্ধ করার পর বছরের চারটি গ্র্যান্ডস্ল্যামে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন একসঙ্গে। পড়ন্ত বেলাটা এলোমেলো হলেও ২৩টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিততে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাঁকে। আসলে সবকিছুরই শেষ থাকে, ভাটা থাকে- সেরেনার বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। টেনিসের এই কোর্ট থেকে ওই কোর্টে জয়োল্লাস করে বেড়ানোটা ঠিকই থামল। অফ ফর্ম, র‌্যাঙ্কিংয়ে ধস আগেই জানান দেয়- তাঁর যাবার সময় হয়েছে। এরপর মা হলেন, মন দিলেন মেয়ে অলিম্পিয়ার দিকে। মেয়ে বড় হলো, মা সেরেনাও ফিরলেন কোর্টে। কিন্তু এই ফেরাটা আর আগের মতো হলো না। শেষমেশ বলতে হলো গুডবাই।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।