সর্বশেষঃ

দীর্ঘ ২৩ বছরেও এমপিও না হওয়ায় চলছে মানবেতর জীবন, খেলার মাঠ গোচারণ ভূমি

ভোলায় ২২ বছরে ননএমপিও শিক্ষালয় এখন গোয়াল ঘর

দীর্ঘ ২৩ বছরেও এমপিও ভুক্ত হয়নি কন্দ্রকপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা। ২০ বছর নিয়মিত চললেও মাদ্রাসার ঘরটি দুই তিন বছর যাবৎ গোয়াল ঘরে রুপ নিয়েছে। সরেজমিনে দেখাযায় মাদ্রাসা টির খেলার মাঠ যেন গোচারণ ভূমি। একসময় মাদ্রাসার উত্তর পাসে একটি টিনসেট বড় শ্রেনী কক্ষছিলো এখন তা নেই, কোথায় গেছে ঘরটি তা কেউ জানেনা। সরকারি বরাদ্ধে আরেকটি নতুন টিনসেট ঘর স্থাপিত হয়। স্থাপনার সাথে সাথে সরকারি বরাদ্ধে আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে। ঘর আর টেবিল চেয়ার পরে আছে নেই শিক্ষক বা শিক্ষার্থী। মাদ্রাসা ঘরটি এখন গরু ছাগলের দখলে রয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে স্থানীয় কতিপয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদ্বয় মিলে স্থাপন করেন এই ধর্মিয় শিক্ষালয়। তখন ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর এলাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো তাও তখন নতুন স্থাপিত হয়েছিল। এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষালয় না থাকায় ১৯৯৯ সালে স্থাপিত হয়েছিল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। অনুমতি পেয়েছে ১লা জানুয়ারী ২০০২ সালে। ২০০৪ সালে একাডেমিক স্বীকৃতি পায় প্রতিষ্ঠানটি। যার মাঃ কোড নং-১৭৭৬৪। প্রতিষ্ঠার পর ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) ভূক্ত হয়নি মাদ্রাসাটি।
ইতোমধ্যে বিনা বেতনে কর্মরত অবস্থায় এ মাদ্রাসার একজন শিক্ষক মৃত্যুবরণও করেছেন। মাদ্রাসা বোর্ড এর নিয়ম অনুযায়ী সকল বিষয়ে ১৮/১৯ বছর যাবৎ নিয়মিত পাঠদান চলছিল মাদ্রাসাটিতে। স্থানীয়দের ভাস্য কোভিড-১৯ এর অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কর্মসূচী বন্ধ রয়েছে।
এ মাদ্রাসা থেকে পাস করে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে বেতন ভাতা পেলেও শিক্ষকরা এখনো বেতন ভাতা পান না। এত বছর ধরে বিনা বেতনে শ্রম দিয়েছেন তারা। দীর্ঘ দিনেও বেতন ভাতা না হওয়ায় মাদ্রাসার ১৪জন শিক্ষক কর্মচারী মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বলে জানান মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক এম ফারুক।
মাদ্রাসার সহকারী সুপারেন্টেনডেন্ট মোঃ হোসেন বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা সাল ১৯৯৯ থেকে এই মাদ্রাসার সাথে আছি। দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর একটানা বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসলেও অদ্যাবধি এমপিও ভূক্ত হয়নি মাদ্রাসাটি। এখন আমার সংসার চলে সকাল-বিকাল ফার্মেসী ব্যাবসা করে। তবে শিক্ষকরা এলোমেলো থাকার কারণে দির্ঘদিন পাঠদান কর্মসূচী বন্ধ রয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
এখানকার অনেক শিক্ষক পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেনও ইতিমধ্যে। কারো অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি হয়েছে। এছাড়া সংসার ও পরিচালনা করতে কেউবা বা বেছে নিয়েছেন মাছের ব্যাবসা, আবার কেউ বিদেশে চলে গেছেন। কেউ সামান্য জমা জমি চাষাবাদ করে ছেলে মেয়ের লেখা পড়াসহ পরিবারের চাহিদা পুরন করেন কোন ভাবে।
সুপারেন্টেন্ডেন্ট মোঃ ফারুক বলেন, আমাদের ছাত্ররা-ছাত্রী পাস করে বিভিন্ন যায়গায় সরকারি বেসরকারী চাকুরী করে বেতন ভাতা পাচ্ছে অথচ আমরা আজো বেতন ভাতা বঞ্চিত। মনের আনন্দ কি জিনিস তা আমরা বুঝি না। উৎসবাদীতে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি না। সব মিলিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি আমরা।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার অবস্থা ও শিক্ষার্থী বিষয়ে এই সুপারেন্টেনডেন্ট বলেন, শিক্ষকরা সব এলো মেলো থাকায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, এই বছরেও তার ১৮ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রশ্ন ছিলো পাঠদান বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা দিবে কিভাবে ? জবাবে বলেন, রেজিষ্ট্রেশন আমার এখানে আমি অন্য প্রতিষ্ঠানে তাদের পাঠদান করাচ্ছি। তবে কোন প্রতিষ্ঠান আপনাকে পাঠদানে সহায়তা করছে ? এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।
এ ব্যাপারে ভোলায় কর্মরত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জিহাদ হাসান জানান, ননএমপিওভুক্ত ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১০টি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে দ-একটা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কর্মসূচি চলমান থাকলেও বেশির ভাগ বন্ধ রয়েছে। তবে আমি এখন এসব প্রতিষ্ঠান কম পরিদর্শন করি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।