গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার সাফল্য

বেবি তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন বোরহানউদ্দিনের কৃষকরা

শাহজল ভাওয়াল। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া গ্রামের বর্গা চাষি। ৪ ছেলে, ৪ মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। সবজি চাষ করে সংসার চালাতেন। উৎপাদন খরচ মিটিয়ে তেমন লাভবান হতে পারেনি। ভাগ্য পরিবর্তনে সিদ্ধান্ত বদল। সবজির সঙ্গে বারোমাসি ফল বেবি তরমুজের চাষ শুরু করেছেন তিনি। কীটপতঙ্গের আক্রমণ না থাকা, স্বল্প সময়ে ভালো ফলন এবং প্রত্যাশিত বাজার মূল্য পাওয়ায় তিনি বেশ সন্তুষ্ট। এখন বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা তাঁর তরমুজের খেত দেখতে আসেন। লাভের কথা শুনে কয়েকজন কৃষক তার দেখাদেখি বেবি তরমুজ চাষ শুরু করছেন।
রবিবার (২৮ আগষ্ট) সকালে সরেজমিনে শাহজলের খেতে গিয়ে দেখা যায়, মাটি থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু লম্বা মাদা (বেড) তৈরি করে মালচিং পেপার (পলিথিনের মতো) দিয়ে শক্ত করে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। চার হাত অন্তর একটি বেড। ১৬ শতাংশ জমির সবটা জাল দিয়ে নিখুঁত ভাবে বেড়া দেওয়া। উপরে ছাউনির মতো ঘুরিয়ে মাচা দেওয়া হয়েছে। সেই মাচায় লাউয়ের মতো ঝুলে আছে ছোট-বড় কালো তরমুজ। দেখতে বেশ সুন্দর। একটি তরমুজ কাটা হলো। বেশ রসাল ও সুমিষ্ট ফল। কচি অবস্থায় এটি তরকারি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়।


শাহজল বলেন, গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থার (জিজেইউএস) কৃষিবিদের সহযোগিতা ও পরামর্শে তিনি এবার নিয়ে তৃতীয় বারের মত বেবি তরমুজের আবাদ শুরু করেন। এখানে শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া তেমন খরচ হয়নি। প্রতিদিন এলাকার কৃষকেরা বেবি তরমুজের ফলন দেখতে আসেন। চাষ পদ্ধতি জেনে যান। কেউ কেউ আবার কিনেও নেন। তিনি বাড়িতে বসেই ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এখন তিনি ৪র্থ বার সুইট ব্লাক’ বা কালো জাত ও নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ তরমুজ লাগানোর কথা ভাবছেন। কারণ, এটি বেশ লাভজনক। ইতিমধ্যে ৬০টাকা দরে ৪ মন তরমুজ বিক্রয় করা হয়েছে। ক্ষেতে আরও ৫ মনের মতো হবে। তরমুজ চাষ করে বেশ ভালো আছি।
সাচড়া গ্রামে শাহজলের মতো চান মিঞা, তরমুজ চাষি, হানিফ, সালাউদ্দিন, আসাদুল্যাহ জানান, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্লাকবেরি তরমুজের রোপন করা যায। ৬০ দিনের মধ্যে এ তরমুজের ফলন আসে। যেখানে সাধারণ তরমুজের ফলন আসতে সময় লাগে ১১০ থেকে ১২০ দিন। তারা জানান এবার ব্যাপক ফল এসেছে। জানান, এই তরমুজ চাষ করে স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। প্রতি শতাংশ জমিতে ২৩-২৬টি চারা রোপন করা যায়। জমি তৈরি থেকে শুরু করে ফল আসা পর্যন্ত এক শতাংশ জমিতে ২৪০-২৫০ টাকা খরচ হয়। যা থেকে সহজেই ৫ হাজার টাকার অধিক আয় করা যায়।
চাষিরা বলছেন, এই তরমুজ সারা বছর চাষ করা যায়। অল্প জমিতে অধিক ফলন হয়। লাভও ভালো পাওয়া যায়। তাই এটির আবাদ বাড়ানোর আগ্রহ তাঁদের। এ জন্য তাঁরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতা চান।


বোরহানউদ্দিন কৃষি অফিস জানায়, ব্লাক বেবী জাতের তরমুজ উচ্চতাপমাত্রা ও হঠাৎ বৃষ্টি সহ্য করে ভালো ফলন দেয়। এটি ভাইরাস মুক্ত তরমুজের জাত। প্রতিটি গাছে ৩-৫টি পর্যন্ত কালো রঙের তরমুজ ধরে। এই তরমুজ লম্বা ডিম্বাকৃতির এবং এর ত্বক পুরু হওয়ায় দীর্ঘ সময় পরিবহনে তরমুজের কোনরূপ ক্ষতি হয় না।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার দরুন বাজার শাখার সহকারি ভ্যালু চেইন ফ্যাসালেটিটর ইকবাল আহমদ অভি জানান, ইফাদের অর্থায়নে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার বাস্তবায়নে প্রথম পর্যায়ে এ বছর বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৩০ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে স্যার, বীজ, কীটনাশক, জাল, রশি ও নগদ অর্থ সহ তরমুজ চাষের সব উপকরণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাচড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ৮টি পয়ন্টে প্রায় ১২৮ শতাংশ জমিতে এই তরমুজ চাষ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাজারে ও স্থানীয়ভাবে বিক্রি হচ্ছে।


বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থার (জিজেইউএস) সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ আনিসুর রহমান টিপু বলেন, ১ বিঘা বা ৩৩ শতাংশ জমিতে এই তরমুজের আবাদ করতে সর্বোচ্চ ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ১ বিঘায় ১ হাজার ২০০ চারা বপন করা যায়। ৭০ থেকে ৮০ দিনে বিঘা প্রতি সর্বনিন্ম ২ হাজার ৪০০ ফল (ওজনে ৫ থেকে সাড়ে ৫ মেট্রিক টন) উৎপাদন করা সম্ভব। সর্বনিন্ম ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. এএইচএম শামীম বলেন, জলাবদ্ধতা হয় না, এমন ধরনের উঁচু জমি এই বারোমাসি তরমুজ চাষের উপযোগী। ‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত ও নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতের বারোমাসি বেবি তরমুজের আবাদ এখানকার কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।