বেঁচে থাকাটাই দৌলতখানের মদনপুরবাসীর লড়াই

ভোলার দৌলতখান উপজেলার বিছিন্ন দুর্গম জনবসতির নাম মদনপুর ইউনিয়ন। রাক্ষুসে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চর খন্ডেই মানবেতর জীবন যাপন করে চলছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এ চরে চাহিদামত শিক্ষা নেই, চিকিৎসা নেই, নেই কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। ঘরে ঘরে আছে শুধু অভাব। চারদিকে তাকালেই চোখে পড়ে নদী আর নদী আর অনাহারক্লিষ্ট মানুষের শীর্ণকায় চেহারা। মদনপুরের বাসিন্দারা সুখ, শান্তি, সুন্দর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবে না, ভাবতে পারে না-সেখানে বেঁচে থাকাটাই যেন রোজকার লড়াই। ভোলার বিচ্ছিন্ন নদীর মাঝামাঝি অতি দুর্গম এ চরেই ১০ হাজার পরিবারের মাথা গুঁজে বসবাস করছেন। ঝড় জলোচ্ছ্বাস কিংবা পানি বাড়লেই তারা পানিবন্দী হয়ে পড়েন। বন্যা হলে পানি গড়াতেই ঘরের চালায় বাস করতে হয় তাদের। ঝড়-ঝঞ্ঝা, প্রাকৃতিক দুর্যোগই চরবাসীর অমোঘ নিয়তি। দিন নয়, মাস নয়, বছরের পর বছর তারা মাটি খামছে পড়ে থাকলেও তাদের খোঁজ নিতে এগিয়ে যায় না কেউ। বন্যা, খরা, ঝড়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবারই তারা সব হারিয়ে ন্যূয়ে পড়েন। দিনের পর দিন অর্ধাহারে অনাহারের মুখে কচু ঘেচু খেয়েও বেঁচে থাকার প্রাণান্ত লড়াই চালাতে বাধ্য হন। তাইতো ক্ষোভ, দুঃখ, অভিমানে চরেরই বাসিন্দা আবু জাফর বলেন, আমরা এদেশেরই নাগরিক, ভোটার কার্ডও আছে। ভোট আইলি পরে তো সক্কলেই হাত পা ধরি ভোট নিতে আসে। কিন্তু ভোটের পর আর খবর থাকে না।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নদীর বুকে চর জাগলে এই চরে কেউ বসবাস করতেন না। ঘর মহিষ লালন পালন করতেন। মেঘনার ভাঙনের শিকার মানুষেরা বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করে সেখানে। ধীরে ধীরে হাজার হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি স্থাপন করা হয়। তৈরি হয় সরকারী গুচ্ছগ্রাম এর পর একটি ইউনিয়ন যার নামই মদনপুর। চরের বাসিন্দারা বিভিন্ন মালিকদের কাছ থেকে বাৎসরিক চুক্তিতে ‘ইজারা নিয়ে’ জমি চাষ করেন।


এখানকার সবগুলো পরিবারের অবস্থান দরিদ্র সীমার নিচে। পেশা হিসেবে দিনমজুরী কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। একদিন কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না তাদের। নুন আন্তে পান্তা ফুরানোর অবস্থায়। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ঘোষণা দিয়ে তা সারাদেশে বাস্তবায়ন করলেও এই চরে তা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বিদ্যুৎ দিয়েছে তবে সুফলের জায়গায় বিফলই বেশি ফলে দুর্গম এ চরে অন্ধকারের ভুতরে পরিবেশ বিদ্যমান।
এছাড়াও মদনপুর চরে সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা আছে তাও ঠিক ভাবে তদারকি নাই। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী নৌকাযোগে নদীর ওপারে গিয়ে পাঠগ্রহণ করলেও তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষা মৌসুমে সন্তানদের স্কুল কলেজে পাঠিয়ে সীমাহীন দুশ্চিন্তায় থাকেন অভিভাবকরা। এ চরবসতি থেকে যেদিকেই যান মূল ভূখন্ডে যেতে খেয়া নৌকা ছাড়া পারাপারের কোনো উপায় নেই। ইদানিং খেয়া পারাপারের ভাড়া এতোটাই বাড়ানো হয়েছে যে, অভাবগ্রস্ত চরবাসীর জন্য তা জুলুমে পরিনত হয়েছে।
গোটা চর এলাকায় মাত্র পাটোয়ারী বাজার ছাড়া অন্যকোন হাট বাজার নাই। এক কেজি লবন দরকার হলেও তিন চার কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেটে, খেয়া পেরিয়ে তবেই দোকানপাটের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়। হাজার হাজার চরবাসীর জন্য মাত্র দুইটি ক্লিনিক তাও থাকেন না স্বাস্থ্য কর্মী নেই। এ কারণে চরবাসীর মধ্যে বিন্দুমাত্র স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে উঠেনি আজও। হাতুরে ডাক্তারই চরবাসীর ভরসা। তবে চরবাসীর সুবিধাতে ১০ শযা বিশিষ্ট হাসপাতাল করার আশ্বাস দিয়েছেন ভোলা-২ আসনের এমপি আলহাজ্ব আলী আজম মুকুল।
মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নু জানান, চরের ক্লিনিক আছে সেবা নাই আবার স্কুলের শিক্ষকরা মনমত আসে যায় বললেও লাভ নাই তবে চরবাসীর বড় সমস্যা বিভিন্ন দূর্যোগ বলেও জানান চেয়ারম্যান।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।