লালমোহনে সন্তানদের সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো এক আদর্শবান দম্পত্তি
মধ্যরাত : পর্ব-৮৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : শ্যামল আমার বন্ধুর শালার ছেলে। দরজায় বেল বেজে উঠল, আমি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে ওকে স্বাদও সম্ভাষণ জানালাম। কেমন করে জানলে ? আমরা টরেন্টো থেকে এসেছি ? ও হেসে বলল, আমি দূর থেকে আপনাকে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। কেমন আছেন ? আমি বললাম, তোমার দিদি জামাই বাবু ভালো ? ও বলল ভাল। আমি দোলাকে ওডকে দিলুম। দোলা দেখ শ্যামল এসেছে। দোলা হাসি হাসি মুখে বেরিয়ে এল। আমি আমার ঘরে বসে তখন কাগজ পড়ছিলাম। দোলা আর শ্যামল তখন অনেকক্ষণ গল্প করল। আমি মনে মনে ভাবলাম, ভালোই হল সমবয়সী ছেলেটাকে পেয়ে ওর মনের পরিবর্তণ কিছুটা হবে। দোলা টরেন্টোর ডিজনী ওয়ালর্ডেও অনেক গল্প করল। শ্যামল যেন রূপকথার রাজ পুত্তুরের গল্পের মত তন্ময় হয়ে ওর মুখের পানে চেয়ে চেয়ে অবাক হয়ে শুনছিল। দোলা বলল, জানেন শ্যামল বাবু ? ডিজনী ওয়ালর্ডে কিচমিতে মোটেলে ছিলেন। আবার বিয়েও দেখলাম, যা জমা হয়েছিল জানেন ? শ্যামল বলল, আপনাদের সাথে গেলে আমার কিন্তু খুব জমা হতো না ?
দোলা বলল, আপনি আমার দাদুকে কিছু বললেন না কেন ? জানেন আমার দাদু কিন্তু খুব ভালো মানুষ, দাদু সবাইকে ভালবাসেন। দোলা বলল, আচ্ছা আপনি বাড়ী বসে খুব পড়াশুনো করেছেন। শ্যামল বলল তেমন আর কি পড়ব ? তবে পড়াশুনো করার চেষ্টা করি। পড়াশুনো না করলে কে খাওয়াবে ? আমরা গরীব, পড়াশুনো ছাড়া গরীবের জীবনের কোন গতি নেই। বাবা বুড়ো হয়েছেন, আমার উপরই তার জীবনের সব আশা আমি পাশের ঘর থেকে সব শুনছিলাম। শ্যামল ছেলেটিকে আমার খুব ভালো লাগে। নিরঅহঙ্কার ভদ্র বিনয়ী গরীব হলেও হতাশায় ভেঙ্গে পরেনি। মাথা উঁচু করে পড়াশুনো করে ফাষ্ট ক্লাশ পেয়েছে। জীবনের উচ্চ আশা পোষণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দীনতায় নীচতায় ভোগেনা ওর কথায় নির্যাতিত মানুষের আর্তনাদ শুনতে পাওয়া যায়। শ্যামল অনেকক্ষণ গল্প করল।
আমি দোলাকে বললাম, দোলা ওকে চা দাও, কিছু খেতে দাও। শ্যামল বলল, না না; আমি সকালে খেয়েই বেড়িয়েছি। আমি বললাম, তবুওত কোথায় এলে কিছু খেতে হয়। দোলা উঠে গিয়ে ওকে বিস্কুট চা এনে দিল। আমি বললাম, ওর কাছ থেকে পড়াশুনো দেখে নাও। সেদিন শ্যামল অনেকক্ষণ ছিল। একথা, ওকথা, সে কথা, না না কথার ভান করে সে অনেকক্ষণ ছিল। বলল, চলনা দোলা আমরা রূসলী-শ্যামবেলী দেখে আসি অনেকটা নায়াগ্রার মত। দোলা বলল, বেশতঃ দাদুকে বললে নিয়ে যাবে শ্যামল বলল না দাদুকে বলনা। আমরা দুজনে বাসে করে দেখে আসতে পারি। সব সময় গুরুজনকে টানা হেচড়া করলে ওনারা বিরক্ত হন। জান দোলা, আমরা ইউনিভার্সিটি থেকে যেতে বাসে করে। দোলা কিছু বলল না। আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে অনেক ছেলে মেয়েরা যাওয়া আসা করে। আমরা হামবরগার বা কেনটোকি নিয়ে যেতে পারি। দুপুর গড়িয়ে আসছিল, আমি শ্যামলকে কিছু খেয়ে যেতে বললাম ও কিছু খাবে না বলে চলে গেল।
(চলবে———-)