সাগরে ঝড়ের কবল থেকে জীবিত জেলেদের ভাষ্য-----

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি আমরা

দিনের বেলায়ও সাগরে ঝড় চলছিল। মনে হয়েছিল সবকিছু ঠিক রয়েছে। তবে রাতের দিকে ঝড়ের তান্ডব বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে মধ্য রাতে প্রবল ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি। এসময় আমাদের ১৯ জনকে নিয়ে উল্টে যায় ট্রলারটি। কোনোভাবে জালের দড়ি আর তেলের খালি কন্টেইনার ধরে অন্তত ১২ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। হঠাৎ দেখতে পাই আমাদের কাছাকাছি একটি ট্রলার রয়েছে। ওই ট্রলারের লোকজন আমাদের দেখে এগিয়ে আসে। পরে তারা আমাদের উদ্ধার করে সুন্দরবনের শ্যালা নদীর কাছাকাছি একটি চরে নিয়ে যায়। তবে সাগরে ভেসে থাকা ওই ১২ ঘন্টার প্রতিটি মুর্হুতে মনে হচ্ছে এই বুঝে মরে যাচ্ছি। এসময় সবকিছু ভুলে বাঁচার জন্য কেবল আল্লাহকেই ডেকেছি। এমন করেই নিজের বেঁচে ফেরার বিভীষিকাময় বর্ণনা দিয়েছেন ভোলার লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের বুড়িরধোন ঘাটের মো. নূরুউদ্দিন মাঝি।
তার মতই গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) মধ্যরাতে গভীর সমুদ্রে জীবন বাঁচানোর ওই যুদ্ধের বর্ণনা দিয়েছেন একই এলাকার জেলে মো. আবুল খায়ের, মো. সবুজ ও আলআমিনসহ অনেকে। সোমবার সকালে লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের বুড়িরধোন ঘাটের তিনটি ট্রলারে করে ৫৫ জন জেলে তাদের বাড়িতে ফিরেন। অন্যদিকে ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের বাতিরখাল ও কাঠির মাথা মৎস্যঘাটের ২০ জেলেও নিরাপদে তাদের বাড়িতে পৌছেছেন।
এদিকে, বাতিরখালের এমভি লামিয়া ট্রলারে থাকা উপজেলার চতলা গ্রামের আব্দুল শরীফের ছেলে আবুল কালাম এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাকে ফিরে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
বেঁচে ফেরা জেলেদের দাবী, সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের চারটি ট্রলারের অন্তত অর্ধকোটি টাকার জাল, তেল ও ট্রলারে থাকা অন্যান্য মালামালের ক্ষতি হয়েছে। এখন এ ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়েও শঙ্কায় আছেন ট্রলার মালিক ও জেলেরা।
উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা তানভির আহমেদ বলেন, প্রথমে নিখোঁজ জেলের সংখ্যা কম জানলেও পরে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় লালমোহনের ৭৬ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে ৭৫ জন জীবিত উদ্ধার হলেও নিখোঁজ রয়েছেন একজন। তার সন্ধানের চেষ্টা চলছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পল্লব কুমার হাজরা জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওইসব জেলেদের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হয়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতি হওয়া জেলেদের তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এরপর তাদের জন্য সরকারি কোনো সহায়তা আসলে তা জেলেদেরকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) মধ্যরাতে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে লালমোহনের ৪ টি ট্রলারের ৭৬ জন জেলে। পরে তাদের পাশ^বর্তী অন্য কিছু ট্রলার উদ্ধার করে সুন্দরবনের শ্যালা নদীর একটি চর ও হাতিয়ায় রাখা হয়। এরপর সেখান থেকে এসব জেলেদের কোস্ট গার্ডের সদস্যরা নিরাপদস্থানে এনে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।