জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে জেলেরা

সাগরে মিলছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, নদীতে নেই

সাগরে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। রুপালি ইলিশে জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রশান্তির হাঁসি ওই জেলে পরিবারগুলোর মাঝে। বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে মাছের আড়ৎগুলো। তবে একেবারে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে ভোলার মেঘনা- তেতুঁলিয়া নদীতে। মেঘনা নদীতে কিছু ইলিশ পেলেও তেতুঁলিয়ায় ইলিশ নাই বললেই চলে। ফলে পদ্মা খ্যাত তেতুঁলিয়ার ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছে ইলিশ প্রিয়ভোক্তাগন। সারাদিন জাল বেয়ে কাঙ্খিত পরিমাণ মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। অন্যদিকে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আরও বেশি বিপাকে তারা। অনেকে এ পরিস্থিতিতে পেশা পরিবর্তন করছেন। এসব তথ্য মেঘনা- তেঁতুলিয়া পাড়ের জেলে, আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীদের।
জেলেরা জানান, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। অন্যদিকে ৬৫ দিনের জন্য ও সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। নদী ও সাগরে প্রায় সাড়ে ৪ মাস মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞার সময় পার করছে তারা। দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার সময় পার করে ঘুরে দাঁড়াতে নদী ও সাগরে নেমে পড়েছেন তারা। গত এক সপ্তাহে সাগরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাচ্ছেন। অন্য দিকে  নদীতে গিয়ে  জেলেকে খালি হাতে ফিরে আসতে হচ্ছে। এরমধ্যে আবার হঠাৎ করে ডিজেলের দাম বাড়াতে  বিপাকে পড়ছেন উপকূলের জেলেরা।
মেঘনার বড় আড়তদার ও শেল্টার বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবুল কালাম, হাকিমুদ্দিন মির্জাখীল ঘাটের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মাঝি, তেতুলিয়া নয়নের খালের জুয়েল মেম্বার, কালাম বদ্দার  জানান, দাদনের লাখ লাখ টাকা নদীর জলে। নদীতে মাছ নেই। আমাদের টাকা উঠছে না। মহাসঙ্কটে আমরা। তিনি বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ জেলে পেশা পরিবর্তন করবে। তারা আরো জানান, এবার নদীতে কোন মাছ নাই। ঝাকে ঝাকে  মাছ পড়ছে সাগরে। সাগরের একটা ফিশিং বোট দৈনিক ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকার ইলিশ শিকার করেন।
জেলে জামাল ও শহিদুল, জাহাঙ্গীর, নেজামাল বলেন, এ বছর  ভরা মৌসুমেও মেঘনায় – তেতুঁলিয়ায় ইলিশেরর দেখা মেলেনি। তবুও আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। নদীতে মাছ ধরা পড়ার। কই এখনো মিলছে না ইলিশ। তেতুলিয়া নদীর অবস্থা আরো করুণ।
বোরহানউদ্দিনের মেঘনার সেন্টার বাজার মাছ ঘাট, হাকিমুদ্দিন মির্জা খালু মাছ ঘাট, সুইচগেট বাজার, তেতুঁলিয়া নয়নের খাল, কালাম বদ্দারের মাছসহ বেশ কয়েকটি আড়ৎ ঘুরে জানা যায়, খুব কম পরিমান  মাছ কেনা-বেচা হচ্ছে। মাছ বিক্রি করে যে টাকা পাচ্ছে তা দিয়ে ছেলেদের খরচপাতি  চালানো মুশকিল।
আড়ৎদার মাসুদ রানা বলেন, নদীতে ইলিশ ধরা না পড়লেও সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে পড়ছে। এ অবস্থা চললে জেলেরা কিছুটা হলেও সংকট দূর করতে পারবেন।
সমরাজঘাটে অবস্থানরত তেঁতুলিয়ার জেলে সিরাজ বদ্দার বলেন, আল্লাহর রহমত  মাছ পাওয়া যায়। সাইজে ও বড়। হেজু মাঝি জানান, সাগরে ইলিশ আছে। তবে সাগর উত্তাল। জাল ফেলানো কষ্টকর।
বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির বোরহানউদ্দিন  উপজেলার সভাপতি শাহে আলম ও ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ মাঝি জানান, সাগরে প্রচুঁর ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে নদীতে মাছ খুবই কম। অন্যদিকে একলাফে তেলের দাম ১১৪ টাকা হয়েছে। এটা জেলেদের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলী আহমেদ আকন্দ বলেন, ইলিশ সাগরের মাছ। ডিম পাড়ার সময় মিঠা পানির খোঁজে তারা নদীতে আসে। বর্তমানে নদীর পানিতে লবনাক্ততা বেশি। তাই সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ থাকলে ও নদীতে ইলিশ নাই। তবে সেপ্টম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নদীতেও মাছ মিলবে বলে আমরা আশাবাদী। তখন জেলেদের এমন সংকট থাকবে না।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।