সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-৮৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

 (গত পর্বের পর) : দোলা কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিচ্ছিল। মুখখানা যেন আমাবশ্যার রাতের মত থম থমে অন্ধকার। সেই মুখি হাসি হাসি মুখখানা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। কোলাহর মুখর সেই দিনগুলি যেন আজ আমার চোখের সামনে ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে। দোলা অপ্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বেশী কথা বলে না। পরদিন খুব সকালে আমি দোলাকে নিয়ে মন্ট্রিলের পথে রওয়ানা দিলাম। আসার সময় কচ এসেছিল, বৌদি, কুসুম ওরা এসেছে, কচও খুব ¤্রয়িমান। আমি গাড়ী স্ট্রাট দেওয়ার সময় কচ আমার দরজা ধরে দাড়িয়ে ছিল। বললাম, কচ মন্ট্রিলে বেড়াতে এস। কচ মাথা নাড়াল। দোলা কোন কথা বললনা। কচ বলল, দোলা টরেন্টোতে আবার বেড়াতে এস। দোলা একবার মুখ তুলে ওর দিকে চেয়ে মাথা নীচু করল।
কুসুম বলল এই দোলা চিঠি দিও। একবার ভার্জিনিয়ায় বেড়াতে এসনা ? দোলা মুখ নীচু করে হাসল। আমি গাড়ী ছেড়ে চলে এলাম। পিছন ফিরে দেখলাম কচ আমাদের গন্তব্য পথের দিকে তাকিয়ে আছে। সারা পথে দোলার সাথে কোন কথা হয়নি। বিকাল ৪টায় এসে আমরা মন্ট্রিলে পৌছে গেলাম। মাঝে গাড়ী থামিয়ে ম্যাক ডোলালে চা খেয়েছি, হামব্বগার খেলাম। দোলাকে নামতে বললাম, ও বলল মাথা ধরেছে, নামবে না। ওর জন্য কোক ও কেন টোকি নিয়ে এলাম। ও বলল, দাদু আমি কিছু খাব না, মাথা ধরা-বমি বমি ভাব। আমার নিজের বিশ্রামের জন্য আমাকে একটু জিরিয়ে নিতে হয়। দোলা গাড়ী থেকে নামছেও না। বাসায় এসে দোলা নিজের ঘরে ঢুকল। আমি আমার ঘরে ঢুকে একয়দিনে অনেক চিঠি এসে পরে রয়েছে, সেগুলো খুলে খুলে পড়ছিলাম। বড়দিও ও দোলার ভাইদের চিঠি পেলাম। হঠাৎ ডোরার একটি চিঠি আমাকে অবাক করে দিল। যে একটা ফোন করে না, আবার চিঠি ? নারী যে রহস্যময়ী তার প্রমাণ পেয়ে গেলাম। দোলাকে ডাকলাম, দোলা তোর চিঠি। দোলা এসে চিঠি নিয়ে গেল।
রাতের দিকে দোলা কিচেনে গিয়ে নিরামিষ সামান্য ভাত করে আমাকে খেতে ডাকল। আমি খাচ্ছিলাম আর দোলাও খাচ্ছিল। বললাম, দোলা পড়াশুনোয় মন দাও। এম. এস. টা পাশ করতে পারলে তোর অনেক দাম হবে। তার পরে পি.এইচ.ডি. টা করে অনেক মূল্য বেড়ে যাবে। দোলা কোন কথা বললনা। মুখ নীচু করে খেয়ে গেল। আমি খেয়ে এসে পেপারটায় মন দিলাম। বিকালের দিকে আমি বারান্দায় বসে আকাশের কত রং তাই দেখছিলাম। মন্ট্রিলে এখন বসন্ত কাল প্রত্যেক গাছে কত রকমারি ফুলের বাহার। নাম না জানা অনেক ফুল আমাকে আকর্ষণ করল। ফুলের গন্ধে চারিদিক বিমোহিত। প্রভাতের দিবাকর দাড়িম্ব তলায় তখনো ছায়া ফেলেনি। ভোরের সৌরভ হয়নি। স্তিমিত পাখ-পাখালিরা আকাশে ডানা মেলার অপেক্ষায় গাছের ওড়ালে ওড়াওড়ি করছিল। আমার বাসার পাশের বাড়ীর প্রতিবেশীর বাড়ীতে ঝোপ ঝাড়ের ফুল বাগানের আগাছাগুলু সাফ সুতরো করছিল। আমি পায়চারি করতে করতে হঠাৎ চমকে তাকালাম রাস্তার দিকে দেখলাম শ্যামল আসছে।

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।