ভোলায় লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধিতে যাত্রীদের ক্ষোভ, মালিকরাও হতাশ

(ফাইল ছবি)

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সারাদেশের মতো ঢাকা-ভোলার সব রুটের লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাপ) সংস্থা এ বর্ধিত ভাড়া ঘোষণা করে। ঘোষিত ভাড়া অনুযায়ী, ঢাকা-ভোলা-খেয়াঘাট ১৯৫ কিলোমিটার দূরত্বে লঞ্চের ডেকের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪৭ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ২ হাজার ১৮৮ টাকা ও ডাবল কেবিন ভাড়া ৪ হাজার ৩৭৬ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা-চরফ্যাশনের বেতুয়া রুটের ২৪৬ কিলোমিটার দূরত্বে ডেকের ভাড়া ৬৮০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ২ হাজার ৭২০ ও ডাবল কেবিন ভাড়া ৫ হাজার ৪৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা-বোরহানউদ্দিন রুটের ১৯৩ কিলোমিটার দূরত্বে ডেকের ভাড়া ৫৪২ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ২ হাজার ১৬৮ ও ডাবল কেবিন ভাড়া ৪ হাজার ৩৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা-দৌলতখান রুটের ১৭৯ কিলোমিটার দূরত্বে ডেকের ভাড়া ৫০৫ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ২ হাজার টাকা ২০ ও ডাবল কেবিন ভাড়া ৪ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা-লালমোহন রুটের ২০১ কিলোমিটার দূরত্বে ডেকের ভাড়া ৫৬৩ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ২ হাজার ২৫২ টাকা ও ডাবল কেবিন ভাড়া ৪ হাজার ৫০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে, ঢাকা-ভোলার সব রুটের লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি করায় সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিস্তর সমালেচনা করা হচ্ছে।
ঢাকা-ভোলা রুটের নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রী জহিরুল ইসলাম লিটন বলেন, ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে এসি বাসে ঢাকা যেতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ১২ শো টাকা। সময় মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা। কিন্তু লঞ্চ ভাড়া যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এতে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে পারে যদি পাবলিক উল্টো দিকে মোড় নেয়। আরেক যাত্রী রাকিব হাওলাদার বলেন ডিজেলের দাম তো দ্বিগুন বাড়েনি, কিন্তু লঞ্চের ভাড়া প্রায় দ্বিগুন বাড়ানো হলো কেন? লঞ্চ যাত্রী স্কুল শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র নির্ধারিত লঞ্চ ভাড়ার যে তালিকা দেখলাম, তাতে ভোলার মানুষের একটু কষ্ট করে হলেও বরিশাল হয়ে ঢাকা যাওয়ার মানষিকতা সৃষ্টি করতে হবে। সামাজিক সংগঠন বিডিএফ এর নেতা এম জহিরুল আলম বলেন, সড়কপথের কিঃমিঃ প্রতি ভাড়া ২.৩০ টাকা হলে নৌপথের ভাড়া কি করে ৩ টাকা হয়? এটা অন্যায়। বড়ই অন্যায়। সাশ্রয়ী নৌপথ!
ব-দ্বীপ ফোরামের সভাপতি মীর মোশাররফ হোসেন অমি বলেন, ভোলা-ঢাকা রুটে লঞ্চ ভাড়া অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধির প্রতিবাদে ব-দ্বীপ ফোরামসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আগামী বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু লঞ্চ মালিক সমিতির অনুরোধে আপাততঃ এ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে, তাদের এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধিতে শুধু যাত্রী নয়, এমনকি লঞ্চ মালিকরাও হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভোলা-ঢাকা রুটের চলাচলকারী এমভি ভোলা লঞ্চের মালিক মো. আসিফ আলতাফ বুধবার সকালে ভোলার বাণী’কে বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাপ) সংস্থা যে তালিকা ঘোষণা করেছে আমি তো এককভাবে অন্য কোন লাইনে যেতে পারবো না। তবে, নীতিগত ভাবে আমি লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে নই। আমি এর বিরোধিতা করছি। কারণ, বর্তমানে লঞ্চ ব্যবসা মন্দা। তার উপরে ভাড়া বৃদ্ধি অযৌক্তিক। লঞ্চ ব্যবসা কোন মজুতদারি কিংবা আড়তদারি ব্যবসা নয়। এ ব্যবসাটি এখন চরম নিকৃষ্ট জায়গায় চলে গেছে। তিনি আরও বলেন, কিছু নিম্ম শ্রেণির লোক এ ব্যবসায় ঢুকে এ ব্যবসাকে একটা বাজে প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে ঢাকা-ভোলা রুটে লঞ্চের ডেকের ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। আর ডাবল কেবিনের ভাড়া ছিল দুই হাজার টাকা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।