দুশ্চিন্তায় কৃষকের মাথায় হাত, সরকারি সাহায্যের দাবী কৃষকের

মনপুরায় আমনের বীজতলা ও ৫ কিলোমিটার বেড়ী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

ভোলার মনপুরায় নি¤œচাপ কেটে যাওয়ায় মেঘনার পানি স্বাভাবিক অবস্থায় বহমান থাকায় ৭ দিন পর মঙ্গলবার জোয়ারের পানি নামতে শুরু করায় ফুটে ওঠেছে ক্ষত-বিক্ষত উপকূলের চেহারা। তবে জোয়ারের বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ ও কাঁচা মাটির রাস্তা। এখন জোয়ারের পানিতে ডুবে রয়েছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। এছাড়াও অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে আমনের বীজতলা ডুবে থাকায় পচন ধরেছে। এতে ক্ষতি মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।
কৃষক মোমিন, হালিম, মামুন, নজরুল, হাফেজ, সলেমান জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় এতদিন আমনের জালা (বীজতলা) সহ ফসল জ্বলে যাচ্ছিল। পরে বৃষ্টি শুরু হওযায় স্বস্তি পাই। কিন্তু গত ৭ দিন ধরে এক নাগাড়ে অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে আমনের জালার (বীজতলা) ক্ষেত ও ফসলের মাঠ ডুবে থাকায় পচন ধরেছে। এতে বীজতলা ও ফসলের মাঠের ক্ষতি পুষিয়ে ফের চাষাবাদ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।


এছাড়াও পানিতে ডুবে থাকা হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসেরহাট গ্রামের প্রান্তিক কৃষকরা জানান, ১ হেক্টর আমনের জালার (বীজতলা) করতে সার, কীটনাশক, জমির চাষ সহ আনুমানিক ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এদের মধ্যে কারও ১ হেক্টর আবার কারও দুই হেক্টর আবার কারও বেশি বীজতলাসহ ফসলের ক্ষতি হয়। সরকারিভাবে বীজ ও কীটনাশক দিয়ে সহযোগিতা না করলে ফের চাষাবাদ করতে মুশকিলে হবে। তাই তারা সরকারি সাহায্যের দাবী জানিয়েছেন।
অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ৫ হেক্টর আমনের বীজতলা সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। তবে জোয়ারের পানি সম্পূর্ণ নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান বেশি হতে পারে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর ডিভিশন-২ এর উপসহকারি প্রকৌশলী আবদুর রহমান দুই কিলোমিটারের বেড়ী বাঁধের ক্ষতি বিষয়ে জানালেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিরা ৫ কিলোমিটারের বেশি বেড়ী বাঁধ ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেন তারা।


সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনারচর, চরযতিন ও দাসের হাট গ্রামের ফসলের মাঠ ডুবে রয়েছে জোয়ারের পানিতে। তবে ওই সমস্ত ফসলের মাঠে ধীরে ধীরে নামছে জোয়ারের পানি। ওই সমস্ত এলাকার কৃষকের আমনের বীজতলা পচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। একই অবস্থা মনপুরা ইউনিয়নের আন্দির পাড় ও কূলাগাজী তালুক গ্রামের ফসলের মাঠে। এখানকার কৃষকের একই অবস্থা।
উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরফৈজুদ্দিন গ্রামের দক্ষিণ মাথার বেড়ী, সোনার চর, চরযতিন ও দাসেরহাট গ্রামের আনুমানিক ৩ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ ক্ষতি হয়। এছাড়াও মনপুরা ইউনিয়নের আন্দির পাড়, কূলাগাজী তালুক ও কাউয়ারটেক এলাকার ২ কিলোমিটার বেড়ী বাঁধের ক্ষতি হয়েছে।


হাজিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার জানান, অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে আমনের বীজতলা নষ্ট হয়। এছাড়া ৩ কিলোমিটারের বেশি বেড়ী বাঁধের ক্ষতি হয়। অপরদিকে ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানত উল্লা আলমগীর জানান, ২ কিলোমিটার বেড়ী বাঁধ সহ আমনের বীজতলা ক্ষতি হয়েছে।


ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ী বাঁধ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ডিভিশন-২ এর উপ সহকারি প্রকৌশলী আবদুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ী বাঁধ মেরামতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জোয়ারের পানিতে ফসলের ক্ষতি হওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবু নাছনাইন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।