সর্বশেষঃ

বঙ্গমাতার জন্মদিন আজ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী আজ। দিবসটি উপলক্ষে সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো সজ্জিত করা, বিলবোর্ড স্থাপন, স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ, পোস্টার তৈরি ও বিতরণ, বঙ্গমাতার জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, শুভেচ্ছা কার্ড বিতরণ এবং মোবাইলে ফোনে এসএমএস পাঠানো হবে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট তৎকালীন গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল রেণু। বাবার নাম শেখ জহুরুল হক ও মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। এক ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
দিবসটিতে সরকারি কর্মসূচি ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। এ লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনের নেপথ্যে প্রেরণাদাত্রী ছিলেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি বঙ্গবন্ধুর গোটা রাজনৈতিক জীবন ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি কাজে প্রেরণার উৎস হয়ে ছিলেন। বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বারবার পাকিস্তানি শাসকদের হাতে বন্দিজীবন যাপন করছিলেন, তখন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কাছে ছুটে যেতেন। তিনি তাদের বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিকনির্দেশনা পৌঁছে দিতেন ও লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাতেন।
বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বাঙালির অহংকার ও নারী সমাজের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক প্রদান একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বঙ্গমাতার জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তিনি আশা করেন, তার জীবনী চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাসংগ্রামের অনেক অজানা অধ্যায় সম্পর্কে জানতে পারবে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলে থাকা অবস্থায় তার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে অনেকে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। তখন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাংলার মুক্তিসংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। এ সময় মুচলেকা দিয়ে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে দলের কতিপয় নেতার নেওয়া সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তিনি হাতে বঁটি নিয়ে বসে আছেন, প্যারোলে মুচলেকা দিয়ে আইয়ুবের দরবারে যেতে পারেন, কিন্তু জীবনে ৩২ নম্বরে যাতে না আসেন। প্রয়াত সাংবাদিক এবং লেখক এবিএম মূসা তার ‘মুজিব ভাই’ গ্রন্থে এ ব্যাপারে লেখেন, শেখ মুজিব যদি মুচলেকা দিয়ে সহবন্দিদের ক্যান্টনমেন্টে রেখে রাওয়ালপিন্ডি যেতেন তবে এ দেশের ভবিষ্যৎ ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।
আরও পরে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সমঝোতা করলে তার সামরিক বাহিনী তাদের সুবিধামতো যেকোনো সময় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে বলে বঙ্গবন্ধুকে সাবধান করে দিয়েছিলেন বেগম মুজিব। একাত্তরের সাতই মার্চের ভাষণের আগেও বঙ্গবন্ধুকে অনেকে অনেক রকম পরামর্শ দিলেও সঠিক পরামর্শটি দিয়েছিলেন তার সহধর্মিণীই। তিনি বঙ্গবন্ধুকে একটি কথাই বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু যেন তার নিজের মনে যা আছে তা-ই ওই ভাষণে বলেন।
বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে ‘বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের নেপথ্যের সংগঠক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটি আজ সকাল ১১টায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ইতিহাসবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট কলাম লেখক সুভাষ সিংহ রায়, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার এডিটর ইনচার্জ মাসুদা ভাট্টি। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুর রহমান। সঞ্চলনা করবেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।