ভোলায় চাঁদা না পেয়ে চলাচলের পথে ঘর উত্তোলণ

ভোলার সদর উপজেলার চর সামাইয়া ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের বড় চর সামাইয়া গ্রামে ৩৫বছরের পুরাতন মাটির সড়কের মধ্যিখানে পাকা দোকান ঘর তুলে হাঁটুরেদের পথরোধ করেছে একটি প্রভাবশালী পরিবার। ওই পরিবারকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা ভোলা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে, পুলিশ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, দোকান ঘরটি একদম তুলে দিয়ে সড়কটি পাকা করে জনগনের চলাচলের উপযুক্ত করা হোক!
ডিসি, ওসি বরাবর পাঠানো অভিযোগপত্র ও গত বুধবার সরেজমিন পথচারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোলা শহর থেকে প্রায় ১২কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমের তেতুঁলিয়া নদী থেকে পূর্ব দিকে উঠে আসা প্রবাহমান খাল। খালের পাশে একটি সরকারি হালট। গত ৩৫বছর ধরে ইউনিয়নের বড়-চর সামাইয়া গ্রামের প্রায় ৩০টি পরিবারের ২শতাধিক মানুষ চলাচলের জন্য হালটটি ব্যবহার করে আসছে। হালটটি পরবর্তীতে মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। যার নাম খামার বাড়ি সড়ক। এ সড়কটি ইউনিয়নের উত্তর-দক্ষিণ বরাবর বিশ্বরোড-ধোপা বাড়ি পাকা সড়কের পাশ দিয়ে পশ্চিম দিকে খামারের দিকে চলে গেছে। কোনো আলোচনা ছাড়াই গত ১৮জুলাই চর সামাইয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলামের (সাবেক ইউপি সদস্য) বোন আঙ্কুরি বেগম ও তাঁর জামাই মো. আলম দাঁড়িয়ে থেকে রাজমিস্ত্রি দিয়ে খামার বাড়ি সড়কের প্রবেশ মুখের মধ্যিখানে (পাকা সড়কের পাশে) পাকা দোকান ঘর তুলেছে এবং সড়কের মধ্যে সুপারি গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। মাটি থেকে ৩-৪টি ইট গাঁথা হলে, পুলিশ কাজ বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে ওই অবস্থায় আছে।
সরেজমিন বুধবার পথের মধ্যে নির্মাণাধীন দোকান ঘর দেখা যায়। দোকানের পাশের বাগানের মধ্য দিয়ে মানুষ চলাচল করছে। কোনো রিকশা-গাড়ি যেতে পারছে না। পায়ে হেঁটে সামনের দিকে এগিয়ে গেলে দেখা যায়, সড়কটির মধ্যে হাঁটু সমান কাঁদা-পানি। পথিমধ্যে একটি কালভার্ট আছে। সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। সড়কের আশ-পাশে ও দূরে বেশ কয়েকটি পরিবার আছে। রাস্তার পাশ দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের খাম্বায় সঞ্চালন লাইন টানা আছে। যারা এ খামার বাড়ি সড়ক ব্যবহার করে পাকা সড়কে ওঠেন। তাঁদের দাবি, দীর্ঘ্যদিন ব্যবহার হয়ে আসা সড়কটি পাকা করে চলাচলের উপযুক্ত করা হোক !
জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে এসব সড়ক ব্যবহারকারী ব্যক্তিরা জানান, এটি সরকারি হালট ছিল। পরে হালটের মাথায় খামার বাড়ি হলে রাস্তা চওড়া হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে গাড়িতে মানুষ চলাফেরা করেছে। হঠাৎ কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আঙ্কুর বেগম রাস্তার মালিকানা দাবি করে মোটা টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় রাস্তার মধ্যে তাঁরা পাকা ঘর তুলেছে। অথচ ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি) থেকে কয়েকবার এ রাস্তায় মাটি ফেলে সংস্কার হয়েছে।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে তোলা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ধোপা বাড়ির সামনের খালের পাশ দিয়ে খামার বাড়িতে যাওয়ার মাটির সড়কটি (হালট) চর সামাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের। জমির পরিমান এক একর ১৮ শতাংশ। যা বিএস জরিপ অনুসারে ৪ নম্বর খতিয়ানের ৩ নম্বর দাগভুক্ত, যা চরসামাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিবের ত্ত্বাবধানে রয়েছে।
চর সামাইয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম ও তাঁর বোন আঙ্কুরি বেগমের দাবি, বিএস জরিফে আঙ্কুরি বেগমের জমির পরিমান ১৮ শতাংশ। যা তাঁর ক্রয়কৃত রেকর্ডিয় সম্পত্তি। এখানে কোনো সরকারি বা ইউনিয়ন পরিষদের জমি নেই। সরকারি জমি আরও ২০০ হাত পশ্চিম থেকে শুরু। এখানে যদি সরকারি জমি থেকেও থাকে, তা খালে ভেঙে ফেলেছে। তার নিজেরও (আঙ্কুর) দুই শতাংশ জমি খালে ভেঙে গেছে। তার মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে, জনগণ হাঁটাহাঁটি করেছে সত্য, কিন্তু তিনি ঢাকাতে থাকাকালিণ সময়ে এখানে একটি খামারের মালামাল আনা নেয়াতে রাস্তা প্রসস্থ করে ফেলেছে। এতে তাঁর অনেক জমি রাস্তার মধ্যে চলে গেছে।
আঙ্কুরি বেগম বলেন, তিনি তাঁর জমির ওপর দিয়ে গাড়ি চলার মতো রাস্তা দেবেন না। মানুষ হাঁটছে, হাঁটুক, এ কারণে দোকান ঘর তুলেছেন এবং পায়ে হাটা পথ দিয়েছেন। তবে আঙ্কুরি বেগমের ১৮শতাংশ বুঝিয়ে দিলে, তার বাড়তি জমির দাবি নেই বলে জানান।
তবে স্থানীয় বিজ্ঞদের দাবি, এখানে ইউনিয়ন পরিষদের হালটের জমি ঠিকই আছে। সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান আঙ্কুরি বেগমের জমির দক্ষিণ পাশের জমিটি ক্রয় করেছে। চেয়ারম্যান তাঁর জমি বুঝে নিতে গিয়ে আঙ্কুরি বেগমকে আরও উত্তরে ঠেলে দিয়েছে। এ কারণেই যতো সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে একাধিক ব্যক্তি জানান, দীর্ঘদিন আঙ্কুরি বেগম পয়সার বিনিময়ে মানুষদেরকে চলাচল করতে দিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি আঙ্কুরি বেগম পয়সা না পাওয়াতে চলাচলের পথ বন্ধ করে দোকান ঘর নির্মাণ করেন, যাতে স্থানীয়রা তাকে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে চলাচল করতে পরেন।
জানতে চাইলে চর সামাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যখন পুরো এলাকার জমি মাফযোখ করা হবে, তখন বোঝা যাবে, রাস্তার জমি ইউনিয়ন পরিষদের না, আঙ্কুরি বেগমের। এরজন্যে কাগজপত্র নিয়ে বসতে হবে।
অপর প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, আঙ্কুরি বেগম তার জমি না মেপে, রাস্তার মধ্যে পাকা দোকান ঘর তুলে পথরোধ করে থাকে, তা অযৌক্তিক। আর যদি সে চলাচলের পথ রেখে দোকান ঘর নির্মাণ করে, তবে পথচারিদের সমস্যা না, খামার বাড়ির লোকজনের সমস্যা। কারণ তাদের গাড়ি চলবে না। এখন সবাই যদি এ সমস্যার সমাধান চায়, বসে সমাধান করতে হবে।
ভোলা সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলী সুজা বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কাগজপত্রে রাস্তার জমিটি ইউিনিয়ন পরিষদের। এক নম্বর খাস খতিয়ান ভূক্ত হলে তিনি সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারতেন, ইউনিয়ন পরিষদের হওয়ার কারণে আবেদনকারীদের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে বলেছিলাম। মামলা করলে সরেজমিন তদন্তে গিয়ে সত্যতা পেলে, পথরোধকারী ওই স্থাপনা ভেঙে ফেলা যায়। তারপরেও তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি যেহেতু ইউনিয়ন পরিষদের, তাই তারাই এ ব্যপারে ব্যবস্থা নিবেন। তারপরও যেহেতু মামলা হয়েছে, জেলা প্রশাসক মহোদয় যে সিদ্ধান্ত দিবেন, সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।