ভোলায় কিছু এলাকায় ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ

ভোলা সদর উপজেলার পৌর কাঠালী, যুগিরঘোল, পি.টি.আই সড়ক ও ভোলা সরকারি কলেজ সড়কসহ কয়েকটি এলাকায় শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টানা ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। ফলে তারা ক্ষুব্ধ হন। যদিও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিভিউশন লিমিটেড কোম্পানি (ওজোপাডিকো) জানিয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ লাইনের আশপাশের গাছ কাটার কারণে ভোলা সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়।
সদর উপজেলার হাসপাতাল সড়ক এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহক এডভোকেট মুন্সি জহুরুল ইসলাম খুসবু অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে কে বলেন, ভোলায় প্রাকৃতিক সম্পদ শাহবাজপুর গ্যাস দিয়ে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও আমরা এ জেলায় নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। আজ বিদ্যুৎ লাইনে পাখি পড়েছে, কাল গাছ কাটা হচ্ছে, পরশু লোডশেডিং এরপর ঝড়-বৃষ্টি দোহাই দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এভাবেই বিদ্যুতের তেলেসমাতি চলছে ভোলায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা রাজধানী ঢাকার মতো অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এখানে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক গ্যাস আছে বলেই আমরা এ গ্যাসের সুবিধা পেতে চাই। পেতে চাই গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধা। সুতরাং এ সুবিধাটুকু থেকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
যুগিরঘোল এলাকার এক গৃহবধূ মুজিযা রহমান পূণ্য বলেন, হঠাৎ করে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় বৈদ্যুতিক ফ্যান ঘুরছেনা। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ঘুমোতে পারছে না।
যুগিরঘোল এলাকার হানিফ স্টোরের মালিক মোঃ হানিফ বলেন, সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় আমার মতো একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় আইচক্রিম গলে যাওয়ার ভয়ে ফ্রিজ খুলতে পারিনি। এতে আমার অন্তত ৫০০ টাকা লস হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মেসার্স খান ফ্লাওয়ার মিলস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জামাল খান বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আমাদের মিলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে এক ঘন্টা মিল বন্ধ রাখতে হয়। আর এক ঘন্টা মিল বন্ধ রাখলে কর্মচারির বেতনসহ প্রায় ৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়। অথচ প্রতিমাসের বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে যদি একদিন বিলম্ব হয়, তাহলে ৫% সুদ ধার্য্য হয়। অর্থাৎ কোন গ্রাহকের এক মাসের বিদ্যুৎ বিল এক লাখ টাকা জমা দিতে একদিন বিলম্ব হলে তাকে সুদআসলে এক লাখ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এটা খুব দুঃখজনক। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবাও।
এ বিষয়ে যুগিরঘোল এলাকায় অবস্থিত ইউনিটি ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) মোঃ এরশাদুল ইসলাম আজাদ জানান, ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অপারেশন চলাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলে অপারেশন থিয়েটারের সকল যন্ত্রপাতি বন্ধ হয়ে গেলে রোগীর জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। এতে চিকিৎসক/সার্জনরা রোগীর জীবন বাচাঁতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এ ছাড়া বহির্বিভাগে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে রিপোর্ট ডেলিভারি দিতে বিলম্ব হওয়ার কারণে ডাক্তার দেখিয়ে রোগীরা যথাসময়ে চিকিৎসা সেবা না নিয়েই বাসায় চলে যান। যার কারণে রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। এ ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আর্থিক ক্ষতি তো রয়েছেই। হাসপাতালের জেনারেটরটাও নষ্ট হয়ে গেছে।
বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান, ভোলায় বিদ্যুৎ নিয়ে তালবাহানা চলছে। ভোলায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থাকলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট মেনে নিতে রাজি নন। তারা আরও জানান, পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র চালানোর কারণে কিছু দিন পর-পর বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। তীব্র এ গরমের দিনে ও সন্ধ্যার পর থেকে অকারণে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ ওজোপাডিকোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী দুলাল চন্দ্র শনিবার বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ লাইনের আশপাশের গাছ কাটার কারণে ভোলা সদর উপজেলার যুগিরঘোল ও ভোলা সরকারি কলেজ রোড এলাকায় ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ বিষয়ে গত শুক্রবার মাইকিংও করা হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।