আমরা একটা অজানা শঙ্কার মধ্য দিয়ে দিন পার করছিঃ এডভোকেট নজরুল হক অনু

ভোলায় চার দিনে তিন হত্যাকান্ড ॥ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হওয়ার আহ্বান

নিহত ওবায়দুল্লাহ’র পরিবারের আহাজারি।

ভোলায় গত চার দিনে ৩টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঈদের পর থেকে এ হত্যাকান্ডগুলো পৃথক পৃথক সময়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সংঘটিত হয়। চার দিনে এই ৩টি হত্যাকান্ডের ঘটনায় ওই সব এলাকাগুলোতে আতঙ্ক এবং চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভোলার সচেতন মহল। বিস্তারিত জানুন আমাদের বিশেষ প্রতিবেদনে।

এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হত্যাঃ নাহিদ নামের এক তরুনকে হত্যার মাত্র ৩ দিন পর বুধবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে ফের হত্যা করা হয়েছে ওবায়দুল্লাহ (১৬) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে। ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রুহিতা গ্রামের এক সুপারি বাগান থেকে তার গলা কাটা রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ওবায়দুল্লাহ রুহিতা গ্রামের মো. আব্দুল্লাহর ছেলে। সে স্থানীয় পশ্চিম রুহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয়রা ওবায়দুল্লাহর রক্তাক্ত দেহ আলীনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রুহিতা গ্রামের জনৈক আবুল কালামের বাড়ির পেছনে একটি সুপারি বাগানে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তারা ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে এসএসসি পরীক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করে। তার শরীরে অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে কেউ তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছেন।
নিহত ওবায়দুল্লাহর মামা মোঃ মহিবুল্লাহ ও মামী নুরতাজ বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে ভোলার বাণী’কে বলেন, ওবায়দুল্লাহ রুহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কে বা কারা আমাদের ভাগ্নেকে এভাবে গলা কেটে হত্যা করেছে তা বলতে পারছি না। ওর সাথে কারো কোন দ্বন্দ্বও ছিলনা। তবে, গতরাতে ওবায়দুল্লাহর কয়েজন বন্ধু ওবায়দুল্লাহকে খোঁজ করছিল।

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আরমান হেসেন নিশ্চিত করে বলেন, সুপারি বাগান থেকে এক কিশোরের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে। এদিকে কিশোরের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ভোলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, নিহত শিক্ষার্থীর সাথে পারিবারিক প্রেমঘটিত কোন বিষয় থাকতে পারে। তবে, যে বিষয়ই থাকুক না কেন খুব শিগগিরই প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধারঃ ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড থেকে পা বাঁধা অবস্থায় এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত সোমবার বিকাল ৪টার দিকে তার নিজ বাসা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শণ শেষে পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, বিকাল ৪টার দিকে ৯৯৯-এ কল পেয়ে ভোলা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে এক মহিলার মৃতদেহ দেখতে পেয়েছি। আমরা তদন্ত করছি, তবে প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি এটা একটা হত্যাকান্ড। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ঝগড়া থামাতে গিয়ে যুবক খুনঃ এর আগে গত (১০ জুলাই) পবিত্র ঈদ-উল-আজহার দিন সকালে প্রতিবেশী স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া থামাতে গিয়ে খুন হয়েছেন নাহিদ (২০) নামে এক তরুণ। একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাচিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নাহিদ ওই গ্রামের শাহে আলমের ছেলে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ রায়হানকে আটক করেছে।

এলাকাবাসী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে রায়হান ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রায়হান বঁটি নিয়ে তাঁর স্ত্রীকে তাড়া করেন। তিনি জীবন বাঁচাতে দৌড়ে প্রতিবেশী নাহিদদের বাড়ির সামনে যান। নাহিদ দুজনের ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় রায়হান হাতে থাকা বঁটি দিয়ে নাহিদের ঘাড়ে কোপ দেন। আশপাশের মানুষ টের পেয়ে নাহিদকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ব্যাপারে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন বলেন, পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রায়হানকে আটক করেছে। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন বলেন, হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং ঘণ্টা খানেক পরে অভিযান চালিয়ে হত্যাকারী রায়হানকে আটক করা হয়। আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভোলার আইনশৃঙ্খলা অবনতির বিষয়ে সুশিল সমাজে প্রতিনিধি সাংবাদিক এডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, ভোলায় পরপর অনেকগুলি খুন হওয়ার কারণে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সাংবাদিকরাও আতঙ্কে রয়েছে। কারণ তাদের শত্রু বেশি, কে কখন কাকে খুন বা গুম করে ফেলে সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। আমরা একটা অজানা শঙ্কার মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। যার কারণে বর্তমান প্রশাসনের প্রতি আস্থা রাখা যাচ্ছে না। তবে জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে করে জনগণ তাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।