সর্বশেষঃ

‘পদ্মাসেতু’ ভোলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমবাংলার যোগাযোগ ও উন্নয়নের এক সেতুবন্ধন

বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুঁড়ি নয়। যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতো, সেই বাংলাদেশ এখন মালদ্বীপ, ভূটান, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের টাল-বাহানার পর যে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য স্বপ্ন ছিল, সারা বিশ্বকে তাক লাগানো সেই বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তব।
স্বপ্নের পদ্মাসেতুর জন্য ভোলা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও বাংলাদেশের মানুষ এখন শুধু শুভক্ষণের প্রহর গুনছে। সব প্রস্তুতি শেষ, আর মাত্র একদিন পর আগামী ২৫ জুন (শনিবার) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে বাংলাদেশের দীর্ঘতম ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কাঙ্খিত পদ্মা সেতু। পৃথিবীর বৃহত্তম সড়ক সেতুগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে নির্মিত পদ্মা সেতু অন্যতম। তবে নদীর ওপর নির্মিত সব সেতুর মধ্যে দৈর্ঘ্যের দিক থেকে পদ্মা সেতুর অবস্থান প্রথম এবং সেতুর ফাউন্ডেশনের গভীরতার দিক থেকেও এর অবস্থান প্রথম। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পরেই শিগগিরই দক্ষি-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সহজ হবে তেমনি গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প ও সম্ভাবনা। সৃষ্টি হবে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান। জীবনযাত্রার প্রয়োজনে শুরু হবে নানা ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্য। এরপর দ্বীপ জেলা ভোলাকে বরিশালের সঙ্গে যুক্ত করতে তেঁতুলিয়া নদীর ওপর দিয়ে দেশের দীর্ঘতম ১০ কিলোমিটার সেতু নির্মিত হলে ভোলার প্রায় ২০ লাখ ৩৭ হাজার জনসংখ্যার ব্যবসা ও যোগাযোগের উন্নয়নে আরেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। ভোলার সঙ্গে বরিশালের সরাসরি স্থল যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। ভোলা যাওয়া আসার একমাত্র উপায় নদীপথ। দ্বীপ জেলা ভোলাকে বরিশালের সঙ্গে যুক্ত করতে তেঁতুলিয়া নদীর ওপর দিয়ে দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। যা নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর ব্যয়ের প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
প্রায় ৩ কোটি মানুষের জীবনে উন্নয়নের নতুন এক গতি আনবে পদ্মা সেতু। এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিরামহীন এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের অবারিত এক সুযোগ সৃষ্টি হবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মাধ্যমে উত্তর-দক্ষিণ কোনো ভাগ থাকবে না। সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যাবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক গতি আসবে। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনে পদ্মা সেতু বিশাল এক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। ইতোপূর্বে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে পণ্য আনার যে সংকট তা ছিল ভাষায় বর্ণনার মতো নয়। ফেরিঘাটে জামে পড়ে মালামাল পচে যাওয়া বা দুর্যোগে লঞ্চ আসতে না পারায় ক্ষতি সব মিলিয়ে সব সংকট দূর হয়ে যাচ্ছে এক পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে।
এরই মধ্যে পদ্মার দুই পাড়ে শিল্প কলকারখানা ও অত্যাধুনিক আবাসিক এলাকা স্থাপন হচ্ছে। সরকারের এক সম্ভাব্যতা জরিপে বলা হয়, সেতুটি নির্মিত হলে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পদ্মা সেতু কী ধরনের ভূমিকা রাখবে সে প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য হচ্ছে, পদ্মা সেতু চালু হলে জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতি যুক্ত হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ বেড়ে জাতীয় আয়ে যোগ হবে। কারণ পদ্মা সেতুর সঙ্গে ওই অঞ্চলের অনেক অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে। এই সেতুর কারণে আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের প্রবাসিরা অপেক্ষা করছেন সেই মহেন্দ্রক্ষণের। বহু প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন (শনিবার) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দিন সকাল ১০টায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি হবে। পূরণ হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা। এগিয়ে যাক আমাদের প্রিয় সোনার বাংলা।

মোহাম্মাদ আবদুল মতিন
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি লেখক ও সাংবাদিক।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।