মধ্যরাত : পর্ব-৭৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : কপালে একটা হলুদ টিপ পড়েছিল। উমা আর দোলা আগেই চলে গেল। আমি আর সুশান্ত পরে যাব বললাম। মেয়েকে তখন পিড়িতে বসান হয়েছে। বাড়ীতে আত্মীয় ও অনাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশির ভীড়। আমি আর সুশান্ত ড্রইং রুমে বসে লোকজনের সাথে গল্প করছিলাম। বাড়ীতে এত মেয়ে মানুষ তার মধ্যে দোলাকে লাগছিল স্বর্গের দেবীর মত। কচ ছায়ার মত দোলার পিছু পিছু থাকছিল। কচ এর গায়ে গরদের একটি পাঞ্জাবী, পরনে খুব মিহিন ধুতী। ওর দেহের প্রতি সকলের চোখ পরে যায়। মুখে স্বলাজ মধুর হাঁসি, বড় বড় সজল-কাজল দুটি চোখ। অধরের উপর সামান্য গোঁপের রেখা।
দোলা অনেক দুরে একটি চেয়ারে বসে কনের হলুদ ছোয়া দেখছিল। একজন সধবা বেশ বয়স্ক কনেকে হলুদ ছোয়াল। তারপর আরম্ভ হল হলুদ ছোয়া ছুড়ি। বৌদিরা সব দেবরদের ধরে ধরে ভুত বানিয়ে দিচ্ছে। দেবররা আর ছাড়বে কেন ? যে বৌদি হচ্ছে তাকে রং লাগিয়ে দিয়ে তবে ছাড়বে। উমাকে কচ রং মাখিয়ে দিল, উমাও ছাড়ার পাত্র নয়। সে কচকে একগাদা হলুদ মুখে চোখে দিয়ে পিচকারী থেকে লাল রং ছড়িয়ে দিল। দোলা ভয়ে জড় সর হয়ে থাকল। কচ কয়েক বার দোলার কাছ দিয়ে যাওয়া আসা করল। কিন্তু সাহস পেলনা। দোলা নিজের সত্তার ব্যক্তিত্বে মাধুর্য্যে ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে দুরে সরে থাকল। তবুও কচ বলল, দেখলেন তো আপনার দিদির কান্ড। এমন গরদের পাঞ্জাবীটাত দিল শেষ করে। আমার এত ভাল পাঞ্জাবী আর একটিও নেই। এই বলে দোলার পাশের চেয়ারে বসে পড়ল। দোলা আড় নয়নে কচকে চেয়ে চেয়ে দেখছিল।
উমা বলল, এইযে বাচাধন সাফাই গাওয়া হচ্ছে। দেখত আমার শাড়ীর কি অবস্থা করেছ; বাড়ী যেয়ে ¯œান করতে হবে। দোলা মুচকি মুচকি হাসছিল। কচ বলল, এই যে বসে আছেন মিস দোলা ? হলুদ ছোয়াবেন না ? উমা বলল, কুমারী মেয়েরা হলুদ ছোয়ায় না। কচ বলল ও তাই ? আমিত মনে মনে ভাবছিলাম ওনি রাগ করেছেন বুঝি ? দোলা মুচকি মুচকি হাসছিল আর আড় নয়নে দেখছিল কচকে। সেদিনের মত দোলা উমা সকলকে নিয়ে বাড়ী চলে এলাম। কিন্তু দোলাকে যেন একটু আনমনা লাগছিল। বিয়ের দিন আবার সকলে গেল, আমি আর গেলাম না। খাওয়ার সময় যাব বলে উমার কাছ থেকে রেহাই পেলাম। উমাকে দেলাকে আগে যেতে বললাম। ওরা দু’জনে খুব সেজে গুজে গিয়েছিল। দোলার মুখখানা লাজুক, লাজুক লাগছিল।
দুপুরের দিকে খাওয়ার মিনিট খানিক আগে আমি সুশান্ত গিয়ে হাজির। উমা মেয়েটিকে সাজান নিয়ে ব্যস্ত। কাজল পরান মুখ চন্দন চর্চ্চিত করা চুল বাধা, বানারসি শাড়ীটিকে অপূর্ব করে গুছিয়ে পড়া সে এক মহাস্থুল ব্যাপার। সকলেই উমাদি, উমাদি করছে। দোলা একপাশে চেয়াওে বসে কচ এর সাথে পড়াশুনোর ব্যাপারে গভীর মনোযোগ দিয়ে আলাপ করছে। আর মাঝে মাঝে কচ এর সাথে দুষ্টি বিনিময় চলছে। কচ এর এক দুর সম্পর্কিয় পিসীমা বলল মেয়েটি কে রে ? কচ বলল কাছেই বাসা। পিসীমা বলল, তোদের দুজনকে ভাল মানিয়েছে ত ? কচ হেসে উঠল, পিসীমা কি যে বলেন। পিসীমা বিধবা, কি কাজে যেন এসেছিলেন বিয়ের জপতপ আনুসঙ্গিক কাজ কর্মের কাজ থেকে তাড়াতাড়ি কেটে পরলেন।
কচ দোলা অনেক্ষণ ধরে নানা কথা বলে চলল, তবু যেন ওদের বলা শেষ হবে না। কচ কুসুমের পাশ থেকে নিনারিসি পারফিউম হাতে নিয়ে দোলাকে বলল, নিন-না মেখে দেখুন মন কেড়ে নেয়। দোলা হেসে ফেলে বলল, মন কাড়ার জন্য সেন্ট মাখতে হয় না। সেটা ভগবানের আশির্বাদ। কচ দোলাকে বলল, তুমি-ত খুব সুন্দর কথা বলতে পার। আমি-ত মনে করেছিলাম তুমি কথা বলতে ভালবাসনা।

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।