সর্বশেষঃ

নিজের অনিয়ম ঢাকতে এবার লালমোহনের মানুষকে টাউট বাটপার বললেন পরিসংখ্যানের আরিফ

ভোলার লালমোহনে জনশুমারী ও গৃহগণনার কাজে সুপারভাইজার এবং গণনাকারী নিয়োগে অনিয়ম করে এবার লালমোহনের মানুষকে টাউট বাটপার বললেন উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের সেন্সাস কো-অর্ডিনেটর আরিফুর রহমান খন্দকার। সোমবার বিকেলে লালমোহন প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা তার বক্তব্য আনতে অফিসে গেলে নিজের অফিসে বসে এ মন্তব্য করেন তিনি।
জানা গেছে, জনশুমারী ও গৃহগণনার কাজে সুপারভাইজার এবং গণনাকারী নিয়োগে লালমোহনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মাদ্রাসা-স্কুলের শিক্ষক, এমনকি মাদ্রাসার প্রধানদেরকেও এ কাজে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ বিজ্ঞপ্তিতে বেকার যুবক-যুবতী ও ছাত্র-ছাত্রীদের এ কাজে নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও লালমোহনে মানা হয়নি সে নির্দেশনা।
এ বিষয়ে লালমোহন প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা আরিফুর রহমান খন্দকারের বক্তব্য জানতে তার অফিসে গেলে তিনি কিছুই করেননি বলে জানান। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘লালমোহনের মানুষ বেশিরভাগই টাউট বাটপার’। এর আগে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ওপর দোষ চাপিয়ে তাদের সুপারীশে স্কুল, মাদরাসার শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেন।
তিনি আগের অফিসারের নিয়োগ দেওয়া একাধিক বৈধ সুপারভাইজার ও গণনাকারীদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়েছেন- যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। এপ্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাইলে জানান, মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় হয়তো কেউ বাদ পরতে পারেন।
লালমোহন পৌরসভাসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে সারাদেশের ন্যায় ১৫-২১ জুন জনশুমারী ও গৃহগণনার কাজ শুরু হবে। এ উপজেলায় ১২৩ জন সুপারভাইজার, ৬৬৭ জন গণনাকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি লালমোহন উপজেলার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে স্পস্ট লেখা আছে উপজেলায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বেকার যুবক-যুব মহিলা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট হতে দরখাস্ত আহবান করা হচ্ছে। এতে সুপারভাইজার পদের জন্য নুন্যতম স্নাতক বা সমমান পাস শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে এবং গণনাকারীদের জন্য নূন্যতম এইচএসসি বা সমমান পাস হতে হবে বলা আছে। বয়স ২৩ থেকে ৪০ ও ১৮ থেকে ৩৫ বছরও নির্ধারণ করা আছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালমোহনে এসবের কোনো নিয়মনীতিই মানা হয়নি। লালমোহন আব্দুল মোতালেব দাখিল মাদরাসার সুপার ইব্রাহিম খলিল। তিনি ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের সুপারভাইজার। অথচ তিনি কোনো নিয়োগ পরীক্ষায়ই অংশগ্রহণ করেননি। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি এর সঠিক জবাব দিতে পারেননি। তার মতো এরকম বহু মাদরাসা শিক্ষককে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কেবল ধলীগৌরনগর ইউনিয়নেই মমিন নেছা দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মোস্তফা কামাল, মাও: নাজিম উদ্দিন, মো: গিয়াস উদ্দিন, মাহমুদিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী আবুল কাশেম, করিমুন্নেছা আলিম মাদরাসার মাও. মফিজ, করিমগঞ্জ ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ঝিল্লুর রহমান, কুন্ডের হাওলা মাদরাসার তালেব, চতলা মাদরাসার পারভেজ, চতলা হাশেমিয়া মাদরাসার আলামিন এর নামও আছে। এই ইউনিয়নের আরেক সুপারভাইজার তানিয়া আক্তারও পরীক্ষা দেননি। নেই স্নাতক পাসও। তবুও সুপারভাইজার হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে এ নিয়োগ কার্যক্রমে বাদ পড়েনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।
দেখা গেছে, পশ্চিম চরউমেদ-৩ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জিব দত্তকে আইটি সুপারভাইজার, লর্ডহার্ডিঞ্জ-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মামুনুর রশীদকে লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সুপারভাইজার, দক্ষিণ রায়চাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সফিকুল ইসলাম, হাজী আব্দুর রশিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবীর, মো. হাসনাইন আহমেদসহ এরকম বহু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বেকার যুবক-যুবতী ও ছাত্র-ছাত্রীদের পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের নেওয়ায় পরিসংখ্যান অফিসের আরিফুর রহমান খন্দকারের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। লালমোহনের সাবেক পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মাঈদুল ইসলাম জানান, তিনি ৯৬ জনকে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে গেছেন। আগের অফিসারের নিয়োগ পাওয়া সালমা আক্তার বুলু বলেন, তিনি নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে যাচাই বাছাই শেষে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। তাকে ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে দায়িত্বও দেওয়া হয়। কিন্তু এখন জানলেন তার নাম নেই। একই অভিযোগ করলেন পারভীন আক্তারও।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।