ছেলের চাকুরী বৈধতা দিতে ভোলার ইলিশা নেছারিয়া মাদ্রাসা সুপারের যত নাটক

ভোলা সদর উপজেলার ২নং ইলিশা ইউনিয়নের মাদ্রাসা হাট সংলগ্ম নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে নিজ ছেলেকে অফিস সহকারী পদে দেওয়া নিয়োগের বৈধতা দিতে নাটক তৈরির অভিযোগ উঠেছে মহিবুল্লাহ্ বিরুদ্ধে।
সূত্রে জানা যায়, ইলিশা নেছারিয়া মাদ্রাসায় একজন আয়া, একজন নিরাপত্তা কর্মী ও অফিস সহকারী নিবে এই মর্মে গত ২১ শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে ভোলার একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। ওই সময় অনেকেই আবেদন করেছেন স্ব-স্ব পদের জন্য, কিন্তু হঠাৎ মহিবুল্লাহ্ নিজ ছেলে অলিউল্লাহ্ কে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিজের মধ্যে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। নিজ ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ার ইচ্ছা জাগলেও যোগ্যতায় ত্রুটি থাকায় ২১শে ফেব্রুয়ারির ২০২০ এর নিয়োগে তার ছেলে অলিউল্লাহ্ আবেদন করতে পারেনি।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কর্তাব্যক্তিদের পরামর্শে প্রথম নিয়োগ বন্ধ রেখে নিজের ছেলের যোগ্যতা হওয়ার পর ২০২২ সালের ২১শে জানুয়ারীতে নতুন করে ভোলার স্থানীয় একটি ও ঢাকার একটি পত্রিকায় পূণরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে তার ছেলে অলিউল্লাহ্ কে অফিস সহকারী পদে এবং কবির হোসেন নামে একজনকে নিরাপত্তা কর্মী ও মাদ্রাসার বর্তমান পিয়ন শাহাজানের মেয়েকে আয়া হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা আলামিন ও দুলাল নামে দুই প্রার্থী।
দুলাল বলেন, প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আমি আবেদন করি, কিন্তু পরে আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে শুনেছি, সেটা আমরা পাইনি। আর আমি প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি, কিন্তু সুপারের কারসাজীতে আমি বাদ পড়ে যাই।
আলামিন নামের আরেক প্রার্থী বলেন, আমার বাবা এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার ছিলেন। আমি নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে আবেদন করেছি। আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেছে সুপার মহিবুল্লাহ্। টাকা দিতে পারিনি বলে আমার চাকুরী হয়নি।
মাদ্রাসা সুপার মহিবুল্লাহ্ বলেন, অফিস সহকারী পদে ৩ জন আবেদন করেছেন। একজনের টা বাদ পড়েছে, আর আরেকজনের সম্পর্কে জানিনা, আমার ছেলের চাকুরী হয়েছে। আর আয়া পদে মাদ্রাসার বর্তমান পিয়ন শাহাজানের মেয়ে এবং নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে স্থানীয় সাবেক মেম্বার কামাল হোসেন এর ভাতিজা ও বর্তমান মেম্বারের বেহাই কবির হোসেন এর চাকুরী হয়েছে।
আলামিনের কাছ থেকে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তারা চোর। তারা আমার মাদ্রাসায় রাতের আধারে তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে চুরি করেছে এবং পিয়ন শাহাজানকে পিটিয়েছে।
প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাদ দিয়েছেন কেনো ? আর সেই নিয়োগে আপনার ছেলে আবেদন করছে কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে সুপার মহিবুল্লাহ্ বলেন, তখন আবেদন করে নাই, পরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করছে এবং সেই নিয়োগেই আমার ছেলের চাকুরী হয়েছে।
দ্বিতীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নাকি শুধু আপনার ছেলেকে নেওয়ার জন্যই দিয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে আপনার বিরুদ্ধে। এমন প্রশ্নের জবাবে সুপার মহিবুল্লাহ্ বলেন, আপনারা আমার পরিচিতো; কি আর বলবো ভাই ?
এদিকে মাদ্রাসার লাইব্রেরিতে ভাংচুর ও পিয়ন শাহাজানকে পিটিয়েছে এর সত্যতা জানতে ভোলা সদর হাসপাতালে গিয়ে পিয়ন শাহাজানের সাথে কথা বললে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, আবু তাহের হুজুরেরা (সাবেক সুপার) খারাপ। পরশুদিন রাতে মাদ্রাসায় চুরি করতে আসছে, আমি দেখেছি পরে আমাকে ও পিটাইছে আমিও পিটাইছি তবে শাহাজানের শরীরে কোন আঘাতের চিত্র ছিলো না।
চুরি করতে এসেছে দেখে আপনি ডাক চিৎকার দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে শাজাহান বলেন, আমি আমার মাদ্রাসার নিরাপত্তা কর্মী (নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত) কবির কে ফোন দিয়ে নিয়েছি। তবে কবিরসহ যারা পরে আসছে কেউ চোরদের দেখে নাই।
রাতে হাসপাতাল আসছেন নাকি সকালে আসছেন এবং মারধরের পর প্রাথমিক কোন চিকিৎসা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে শাহাজান বলেন, কোন চিকিৎসা নেইনি; বাড়ীতে এসে ঘুমাইছি। পরের দিন সকালে সুপারে এনে হাসপাতালে ভর্তি করাইছে।
এ বিষয়ে নেছারিয়া মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সোহরাওয়ার্দী মাষ্টার বলেন, যারা নিয়োগ পেয়েছে যোগ্যতার ভিত্তিতেই পেয়েছে। তবে সুপারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে সেটা সুপারের নিজস্ব বিষয়।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ডিজি প্রতিনিধি নিয়োগ সংক্রান্ত) জিহাদ হাসান বলেন, একটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হইছে এটাই আমি জানি। তবে একটু ঝামেলা হয়েছে নিয়োগের ব্যাপারে এটা শুনেছি এবং চুরির বিষয়ে আমি অবগত না বা পিয়ন শাহাজান আহত কিনা সেটাও আমি জানিনা এবং কেউ জানাইনি।
এ বিষয়ে ভোলা সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন, সুপার মহিবুল্লাহ্ বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছে, তদন্তসাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নিবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।