বরগুনায় প্রাক-বাজেট সভা অনুষ্ঠিত

বরগুনা সদর উপজেলার ৮নং বরগুনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে এবং ওয়াশ এসডিজি নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ও ডরপ এর সহযোগিতায় গত ১২ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে প্রাক-বাজেট সভা ২০২২-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস আলো আকনের সভাপতিত্বে এ বাজেট পেশ করা হয়।
প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর পার্থ সারথী কুন্তলের সঞ্চলানায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বরগুনা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস আলো আকন সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সেলমা হিলগারসম, প্রোগ্রাম ম্যান্যেজার, সিমাভি, নেদারল্যান্ড; মিংমা শেরপা, দেশীয় প্রতিনিধি, সিমাভি নেপাল; প্রগতি বজর্চারিয়া, সিমাভি, নেপাল; কর্মঠ সুদেবী, একভো, নেপাল; বাংলাদেশ ওয়াশ এ্যালাইন্সের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর অলোক কুমার মজুমদার।
এ সময় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোঃ শামসুল হক, প্রতিবন্ধী, অসহায় বিধবা, হিজরা, কুলি, মুচি, প্রান্তিক জেলে, ছাত্রী, স্কুল শিক্ষকসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিগণ। আলোচকগণ বলেন, সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের বিকল্প নেই। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন অবস্থার উন্নয়নে তারা নিরাপদ খারার পানির জন্য নলকুপ/পানির উৎস, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনামূল্যে টয়লেট উপকরণ বিতরণ, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাসিক বান্ধব টয়লেট নির্মাণ, হাতধোয়র ডিভাইস স্থাপন, মেয়েদের ব্যবহারের জন্য ন্যাপকিন বিতরণের দাবী করেন। এছাড়ারাও জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাাণ, নষ্ট নলকুপের গোরা পাকা করনসহ মেরামত, বিভিন্ন বাজার বাসস্ট্যান্ডে গণশৌচাগার নির্মাণসহ নারীদের জন্য বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দের দাবী জানান।
৯টি ওয়ার্ডের সামাজিক মানচিত্র অংকন ও ওয়ার্ড সভা থেকে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে দেখা যায় স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট উপকরণ বিতরণ, নিরাপদ খারার পানি, হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন, গণশৌচাগার, স্কুল টয়লেট স্থাপনে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৯৫ লাখ ১০ হাজার টাকা বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নেপালের প্রতিনিধি সেলমা হিলগারসম বলেন, প্রাক-বাজেট আলোচনায় ইউনিয়ন পরিষদ যেভাবে আয়োজন করে সাধারন মানুষ তথা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির কাছ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা নিয়ে এসেছে এটি অত্যন্ত প্রশংশনীয়। এটি বাদ যাবেনা কেউ এই কথার বাস্তব রুপ। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনায় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার বিশ^াস। এখানে প্রান্তিক নারীরা যেভাবে তাদের দাবীগুলি তুলে ধরেছে তাতে আমি বিশ^াস করি ২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষমাত্রা অর্জন করবে। ডরপ যে ইউনিয়ন ওয়াশ ডেক্স এর কনসেপ্ট উদ্ভাবন করেছে এবং ইউনিয়ন পরিষদ ওয়াশডেক্সকে তাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসাবে গ্রহন করেছে। তাতে সাধারণ মানুষ তথা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি আরো বেশি উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি। এখানে নলকুপ মেকানিক, রিং-স্লাব উদ্যোক্তা, ন্যাপকিন উৎপাদন উদ্যেক্তা, বিক্রয় প্রতিনিধি, টয়লেট পরিস্কার কারক একত্রে ওয়াশডেক্সে বসে মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করে এটা নজির বিহীন। বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের এই ওয়াশডেক্স কার্যক্রমকে আমরা আমাদের দেশে দরিদ্র তথা অনঅগ্রসর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।
সভাপতির বক্তব্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাকে একযোগে কাজ করার আহবান জানাই। ডরপ ও ওয়াশ এসডিজি নাগরিক কমিটি এই কাজে এগিয়ে আসার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ তথা ইউনিয়ন বাসির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরো বলেন, বরগুনা সদর ইউনিয়নে সামাজিক মানচিত্র ও ওয়ার্ড সভা থেকে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন বিষয়ে যে পরিমান চাহিদা উঠে এসেছে তাহা ১ বছরে বাস্তবায়ন করা কঠিন। তারপরও আমরা বেশিগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিকে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের উ¤েœাক্ত বাজেট সভায় অন্তর্ভূক্ত করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। পাশাপশি উপজেলা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাবো। তিনি নেপল ও ন্যাদারল্যাল্ডের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণকে ইউনিয়ন পরিষদে আসা ও ইউনিয়ন পরিষদের কার্য়ক্রমগুলি বাস্তবে পর্যবেক্ষণসহ দেখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ তথা ইউনিয়ন বাসির পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিন্দন ও ধন্যবাদ জানান। আরো উপস্থিত ছিলেন উত্তরন, এইচপি আশা, স্লোব বাংলাদেশ, ডরপ, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্য, ওয়াশ এসডিজি নাগরিক কমিটির সদস্য, স্যানিটেশন, পানি সরবরাহ ও পয়:নিস্কাশন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, স্কুল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্যকর্মী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।