মনপুরার কলাতলী চরে সবজি চাষে কৃষকের মুখে হাসি

ভোলার মনপুরা উপজেলার কলাতলী চরে পতিত জমিতে সবজি চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। চলতি মৌসুমে এখনো আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও সবজির চাষ ভাল হওয়ায় লাভের আশা করছেন চরের চাষিরা। সবকিছু ঠিক থাকলে সবজির চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন তারা। জানা যায়, উপকূলীয় জেলা ভোলার বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম দ্বীপ উপজেলা মনপুরার মেঘনা নদীর মাঝে জেগে ওঠা কলাতলী চরে এই মৌসুমে কৃষকরা টমেটো, মিষ্টি আলু, ঢেঁরস, রেখা ও করল্লাসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছেন। নদীর লবনাক্ত পানি কলাতলী চরে প্রবেশ করায় এ চরে গত কয়েক বছর ধরে তেমন কোন ফসল হচ্ছিল না। ফলে পতিতই পড়েছিল সেই জমি। চলতি মৌসুমে এনজিও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে বিনামূল্যে বীজ, জৈব সার, কেঁচো সার এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে এবার সবজি চাষ করে লাভের আশা দেখছেন স্থানীয় চাষিরা। এই চরের লবনাক্ত মাটিতেও সবজির চাষ করে ভালো ফলন হয়েছে। আগে চরের এই জমিতে শুধুমাত্র আমন ধানের চাষ করা হতো। ধান চাষে কৃষকরা তেমন লাভ না পাওয়ায় দিন দিন ঝুঁকেছেন বিকল্প সবজি চাষের দিকে। এরই ধারাবাহিকতায় চরের চাষিরা চরে টমেটো, মিষ্টি আলু, ঢেঁরস, রেখা ও করল্লাসহ বেশ কয়েক প্রকার সবজির চাষ করেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ঠিক থাকলে ও বাজারে দাম ভালো পেলে এ বছর বেশী লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় চাষিরা। চরের সবজি চাষি মোঃ ইয়াছিন বলেন, এ মৌসুমে চরের জমিতে রেখা ও করল্লার চাষ করেছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে মোট ৪০ শতাংশ জমির মধ্যে এ বছর ৮ শতাংশ জমিতে ফসলের চাষ করি। চরে প্রায় ২০ একর জমিতে রেখা ও করল্লার চাষ করেছি। এই বছর যে পরিমাণ সবজির চাষ হয়েছে এতে লাভবান হব বলে মনে করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পরবো। স্থানীয় সবজি চাষি তাহের সারেং বলেন, লবনের কারণে এ চরে কোন গাছ চেতে না (বৃদ্ধি পায় না)। কিন্তু এবার লবনাক্ত জমিতে টমেটো, মিষ্টি আলু ও ঢেঁরস চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। চরের চাষি মহিউদ্দিন, নাজিমউদ্দীন ও হাসেম জানান, নদীবেষ্টিত কলাতলী চরের চারিদিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় এবং গত কয়েক বছর ধরে পানির উচ্চতাও বেড়ে যাওয়ায় জোয়ারের লবনাক্ত পানি ভেতরে ঢুকে যায়। এতে জমির বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কোন ফসলের ফলন ভালো হয়না। তবে, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে বীজ ও জৈব সার নিয়ে তারা বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন। স্থানীয় অর্ধ শতাধিক চাষি সবজি চাষে উদ্বুদ্ব হয়েছেন। তারা আগামীতে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ নিয়ে সবজি চাষ করবেন বলে জানান। এ বিষয়ে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার কলাতলী চরের শাখা ইনচার্জ মোঃ মাহবুব জানান, তারা ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে কলাতলী চরে কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি বলেন, নদীর লবনাক্ত পানি এ চরে প্রবেশ করে কৃষকের ফসলী জমি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এ চরে আমরা বিকল্প পরিবেশবান্ধব ও লবনাক্তসহিষ্ণু জমিতে চাষাবাদ কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। সংস্থাটির কৃষিবিদ আনিছুর রহমান টিপু বলেন, কলাতলী চরে এ বছর থেকে পরীক্ষামূলক ইকলোজিকাল ফার্মিং (পরিবেশ বান্ধব ফসল চাষ) প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের পেইজ প্রকল্পের সহযোগিতায় এবং গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, লবনাক্ত এ জমিতে যাতে কৃষকরা তাদের ফলন ভালো ফলাতে পারে সেজন্য এ চরের কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্যে বিভিন্ন জাতের সবজির বীজ, জৈব সার, কেঁচো সার বিতরণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন বলেন, আমরা কলাতলীর চরে এখন পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করলেও ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহন করার ইচ্ছা রয়েছে। সেক্ষেত্রে চাষীদের বসতভিটা ও তাদের বাড়ির আঙ্গিনার জমি উচু করতে হবে। এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী বলেন, কলাতলীর চরের চারিদিকে কোন বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের লবনাক্ত পানি ভেতরে ঢুকে। ফলে আমনের মৌসুমে শুধু আমন ধান ছাড়া কোন ফসল হয়না। ওই চরে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা কৃষকদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে, কলাতলীর চরে চারিদিকে বেড়িবাঁধ নির্মিত হলে ওই চরে আরও ভালো ফলন হবে বলেও মনে করছেন এ কর্মকর্তা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।