মনপুরার কলাতলী চরে সূর্যমুখীর ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি

ভোলার মনপুরার কলাতলী চরে পতিত জমিতে সূর্যমুখীর ভালো ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ চরে সূর্যমুখীর চাষ করে লাভের আশা দেখছেন চাষী শাহ জালাল। তিনি জানান, নদীর লবনাক্ত পানি কলাতলী চরে প্রবেশ করায় এ চরে গত কয়েক বছর ধরে তেমন কোন ফসল হচ্ছিলনা। ফলে পতিতই পরেছিল সেই জমি। চলতি মৌসুমে স্থানীয় এনজিও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে বিনামূল্যে সূর্যমূখীর বীজ ও জৈব সার এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে আরও বেশী লাভের আশা দেখছেন চাষী শাহ জালাল। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ঠিক থাকলে ও বাজারে সূর্যমুখীর দাম ভালো পেলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশী লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় এ চাষি।
তাঁর সাফল্য দেখে স্থানীয় অর্ধশতাধিক কৃষক সূর্যমূখী চাষে উদ্বুদ্ব হয়েছেন। তারা আগামীতে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ নিয়ে সূর্যমুখীর চাষ করবেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় কৃষক সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, পাশ্ববর্তী চাষী শহ জালালের সূর্যমুখী চাষের সাফল্য দেখে আমাদেরও এ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। আগামীতে আমরাও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ নিয়ে সূর্যমুখীর চাষ করবো।
স্থানীয় চাষীরা জানান, নদী বেষ্টিত কলাতলী চরের চারিদিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় এবং গত কয়েক বছর ধরে পানির উচ্চতাও বেড়ে যাওয়ায় জোয়ারের লবনাক্ত পানি ভেতরে ঢুকে যায়। এতে জমির বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কোন ফসলের ফলন ভালো হয়না।
এ বিষয়ে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার কলাতলী চরের শাখা ইনচার্জ মোঃ মাহবুব জানান, তারা ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে কলাতলী চরে কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি বলেন, নদীর লবনাক্ত পানি এ চরে প্রবেশ করে কৃষকের ফসলী জমি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এ চরে আমরা বিকল্প পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদ কর্মসূচি গ্রহন করি।
সংস্থাটির কৃষিবিদ আনিছুর রহমান টিপু বলেন, কলাতলী চরে এ বছর থেকে পরীক্ষামূলক ইকলোজিকাল ফার্মিং (পরিবেশ বান্ধব ফসল চাষ) প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের পেইজ প্রকল্পের সহযোগিতায় এবং গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষামূলক ভাবে এ প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, লবনাক্ত এ জমিতে যাতে কৃষকরা তাদের ফলন ভালো ফলাতে পারে সেজন্য এ চরের কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্যে বাড়ি সূর্যমূখী-৩ ও বিভিন্ন জাতের সবজির বীজ, জৈব সার, কেঁচো সার বিতরণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে বিভিন্ন সবজির বীজ, কেঁচো সার উৎপাদনের জন্য ৫০ জনকে রিং স্লাব ও ড্রাম দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনেকটা অনুকূলে থাকায় এ বছর দ্বিগুণ ফলনের আশা করছেন তিনি। শুধু মনপুরার কলাতলীর চর নয়; ছাড়াও ভোলা সদর, চরফ্যাশন, দৌলতখান, বরিশাল জেলার বাখেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায় এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন বুধবার ভোলার বাণী’কে জানান, আমরা কলাতলীর চরে এখন পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করলেও ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহন করার ইচ্ছা রয়েছে। সেক্ষেত্রে চাষীদের বসতভিটা ও তাদের বাড়ির আঙ্গিনার জমি উচু করতে হবে।
এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী ভোলার বাণী’কে বলেন, কলাতলীর চরের চারিদিকে কোন বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের লবনাক্ত পানি ভেতরে ঢুকে। ফলে আমনের মৌসুমে শুধু আমন ধান ছাড়া কোন ফসল হয়না। ওই চরে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা কৃষকদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। আমিও তাদের কয়েকটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। তবে, কলাতলীর চরে চারিদিকে বেড়িবাঁধ নির্মিত হলে ওি চরে আরও ভালো ফলন হবে বলেও মনে করছেন এ কর্মকর্তা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।