সর্বশেষঃ

ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘরে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে

ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘরে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থী জাদুঘরে ছুটে আসেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই তরুন। তারা এখানে এসে জানতে পারছে মুক্তিযুদ্ধের অজানা বিভিন্ন তথ্য। ভোলা জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাধীনতা জাদুঘরে ঘুড়তে আসেন বহু মানুষ। জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তারা এসেছেন ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘরে। এখানে এসে মুগ্ধ হচ্ছেন তারা। এখানকার মন্তব্য বইতে লিখে গেছেন বিভিন্ন অসাধারন মন্তব্য।
২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘরে এসেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান। তিনি জাদুঘরে সংরক্ষিত পরিদর্শকের মন্তব্য বইতে লিখেছেন ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর এক অকল্পনীয় সৃজনশীল সৃষ্টি। মানুষের প্রতি ভালবাসা, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার সুকঠিন সংকলন না থাকলে এমন চিন্তা এবং তার বাস্তবায়ন অসম্ভব। এ মহৎ কর্মের মহানায়ক ভোলার কৃতি সন্তান বাংলাদেশের রাজনীতির অগ্নিপুরুষ জনাব তোফায়েল আহমেদকে কুর্নিশ জানাই। তাঁর দীর্ঘ জীবন ও কর্মময় সাফল্যমন্ডিত জীবন কামনা করেন দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান।
এ ছাড়া স্বাধীনতা জাদুঘরে এসে পরিদর্শকের মন্তব্য বইতে বিভিন্ন মন্তব্য লিখে গেছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সবুর, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ইশহাক, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জহুরুল হক, ৫৬০ মডেল মসজিদের প্রকল্প পরিচালক মজিবুর রহমান, ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আসসামস্ জগলুল হোসেন, নড়াইলের জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী মোঃ মশিয়ার রহমান, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এআইজি মাহফুজা আক্তার, আকিজ গ্রুপের এমডি শেখ বশির উদ্দিন, বরিশাল বিভাগের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামানসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ।
ভোলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে জেলার উপ-শহর নামে খ্যাত বাংলাবাজারে তিন তলা বিশিষ্ট আধুনিক স্থাপত্যশৈলির নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ডিজিটাল এ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে ভোলা-১ আসনের এমপি তোফায়েল আহমেদ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৫ সালের ৬ মার্চ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
ডিজিটাল স্বাধীনতা জাদুঘরের প্রথম তলায় রয়েছে তিনটি ভাগ। উত্তর পাশে একটি লাইব্রেরি, দক্ষিণ পাশে একটি অডিটোরিয়াম এবং মাঝখানে একটি প্রদর্শনী স্থল। লাইব্রেরিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের সংগ্রহ। এখানে এসে দর্শনার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ার সূযোগ পাবে। প্রথম তলায় রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বঙ্গভঙ্গ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, দেশভাগ, বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের দুর্লব ছবি।
দ্বিতীয় তলার প্রদর্শনীটি সাজানো হয়েছে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে স্বাধীনতার ইতিহাসের আলোকে। এখানে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৫৮-র সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ‘৭০-এর নির্বাচন, মার্চের অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চের গণহত্যা, প্রতিরোধ যুদ্ধ, ‘৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ।
তৃতীয় তলায় রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে এ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও অর্জনের কালের সাক্ষী বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন তোফায়েল আহমেদের সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রার কথা ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব বরেন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী তোফায়েল আহমেদের দুর্লভ ছবি। মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে আলোকচিত্রীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ‘স্বাধীনতা জাদুঘরে’। এ ছাড়া রয়েছে ৭ মার্চের ভাষণসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগের দুর্লভ সব আলোকচিত্র। এখানে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের আলোকচিত্র। জাদুঘরটির একটি অংশে বাঙালির লোকজ সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে দর্শনার্থীরা ডিজিটাল টাচ স্ক্রিন ব্যবহার করে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ও তথ্য জানতে পারছেন।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন তরুণ, যুবক, চাকরিজীবী নারী-পুরুষ দেখতে এসেছেন স্বাধীনতা জাদুঘর। অনেকে আবার অটোরিকশা ভাড়া করেও এসেছেন। কথা হয় ভোলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থী মোঃ সুমন (১৮) ও স্থানীয় বিস্কুট কোম্পানির কর্মচারি সোহাগ (২০) বলেন, স্বাধীনতা জাদুঘরে এসে ভালোই লেগেছে। এখানে দেখার অনেক কিছু আছে। তবে, ভেতরে ছবি তুলতে দিচ্ছে না। তারা বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে নতুন প্রজন্মের জন্য এক তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করছে স্বাধীনতা জাদুঘরটি। তথ্যভিত্তিক ভিডিও ও দুর্লভ ছবির সংগ্রহ দেখে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাবাজার স্বাধীনতা জাদুঘরের ইনচার্জ মো. নকিব শুক্রবার ভোলার বাণী’কে বলেন, স্বাধীনতা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি দেখতে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ দর্শনার্থী আসতো। পরবর্তীতে মহামারি করোনার কারণে দর্শনার্থীর উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও বর্তমানে ১৫০ থেকে ২০০ জন দর্শনার্থী আসেন। এখানে কোনো প্রবেশ মূল্য নেই। বৃহস্পতিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত থাকে এই জাদুঘর। এটি সব শ্রেণীপেশার মানুষের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।