সর্বশেষঃ

ভোলায় বাড়ছে নির্মাণ সামগ্রীর দামও, উন্নয়ন কর্মকান্ড বন্ধ হওয়ার উপক্রম

ভোলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের সাথে পাল্লা দিয়ে এবার বাড়ছে নির্মাণ সামগ্রীর দামও। বিশেষ করে রড-সিমেন্ট, ইট, পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলার অনেক ঠিকাদার তাদের চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতারা হতাশায় ভূগছেন। এতে করে এ জেলার উন্নয়ন কাজে গতি কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এভাবে দফায় দফায় নির্মান সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আবাসন খাতও চরম সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঠিকাদার ও নির্মাণ সামগ্রী ক্রেতা-বিক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, নিত্যপণ্যের সাথে এখন নির্মাণ সামগ্রীর দামও পাল্লা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি টন রডের মূল্য গড়ে দুই হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের মূল্য বেড়েছে ৫০ টাকা। পাথরেরও সংকট দেখা দিয়েছে। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না দেশীয় উৎপাদিত বিটুমিনের। এরই মধ্যে অনেক ভাটার মালিকরা বন্ধ করে দিয়েছে ইট বিক্রি। এতে নির্মাণ কাজে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মূল্য বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকারের চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আর্থিক লোকসানের শিকার হচ্ছেন ঠিকাদাররা।
এ বিষয়ে ভোলার এলজিইডি ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিশিষ্ট ঠিকাদার নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, নির্মান সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোলায় আমার নির্মানাধীন সব উন্নয়ন কাজ এখন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৬ কোটি টাকার নির্মানকাজ ও ছোট ছোট ব্রিজের কাজসহ প্রায় ৩০ কোটি টাকার নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু রড, সিমেন্ট ও পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় সেসব কাজ এখন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কারণ, যে পাথর ভোলায় আনতে খরচ হতো ১৮০ টাকা। সেই পাথর এখন ভোলায় আনতে খরচ পরে ২২০ টাকা। যেই সিমেন্টের ব্যাগ কিনেছি ৪০০ টাকায় সেই সিমেন্ট এখন কিনতে হচ্ছে সাড়ে ৫০০ টাকায়।
ভোলা শহরের বাসষ্ট্যান্ড এলাকার বিশিষ্ট নির্মাণ সামগ্রী বিক্রেতা সোহেল চৌধুরী বলেন, হঠাৎ করেই কোম্পানি নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, গত দুই দিন আগে যে সিমেন্টের ব্যাগ (সুপারক্রিট) বিক্রি করেছি ৫০০ টাকায়। সেই সিমেন্টের ব্যাগ (গত মঙ্গলবার) বিক্রি করতে হচ্ছে সাড়ে ৫০০ টাকায়। এভাবে রড-সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে গেলে আমাদের পক্ষে আর ব্যবসা করা সম্ভব হবে না বলেও মনে করেন এ নির্মাণ সামগ্রী বিক্রেতা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবধরনের উন্নয়ন কাজে এর প্রভাব পড়ছে। যে কারণে হয় ঠিকাদারদের বেশি খরচে কাজ চালিয়ে যেতে হবে, না হয় রডের দাম কমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বেশিরভাগ ঠিকাদারই দাম কমার জন্য উন্নয়ন কাজ ফেলে রেখে অপেক্ষা করবেন। এতে করে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
এদিকে আবাসন খাতেও নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে। ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে উপকরণের দাম বৃদ্ধি এ খাতটিকে বিরূপ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিবে। এ বিষয়ে ভোলা জেলা ঠিকাদার সমিতির আহ্বায়ক রুহুল আমিন কুট্টি বলেন, ভোলা এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জেলা পরিষদ, পৌরসভাসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। এতে ঠিকাদাররা সবাই সরকারের উন্নয়ন কাজের অংশীদার। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের অজুহাতে নিত্যপণ্যের দামের সাথে হঠাৎ করে নির্মান সামগ্রীর দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে ঠিকাদাররা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাই নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে ঠিকাদারদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।বিষয়টি আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ে কথা বলে এ ব্যাপারে একটি সমাধানের চেষ্টা চালাবেন।
নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোলা জেলার উন্নয়ন কর্মকারন্ড ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে ভোলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইব্রাহীম খলিল ভোলার বাণী’কে বলেন, বিষয়টি আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকতাদের জানিয়েছি। তারা যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবেন সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলজিইডির অধীনে ভোলায় বর্তমানে প্রায় ৩ শো কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।