ভোলায় আলু ক্ষেতে পোকা, লক্ষ্যমাত্রা ভেস্তে যাওয়ার আশংকা

উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলায় আলু ক্ষেতে দাউদ, পাতা পচা রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমন দেখা দিয়েছে। আলু ক্ষেতে রোগ ও পোকার আক্রমণের কারণে অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোলার আলু চাষিরা। অধিকাংশ আলু ক্ষেতেই এখন পাতা পচা, দাউদ, গুনগুন পোকার (জাত পোকা) আক্রমণ এবং পাতা মোড়ানো রোগে আক্রান্ত। এতে আলু চাষে উৎসাহ কমে গেছে অনেক চাষির। চাষিরা জানান, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সার, ওষুধ ও কীটনাশক প্রয়োগ করে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সরকারি কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় ৫ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়। লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ২২০ হেক্টর। গত বছর জেলায় ৫ হাজার ২১৯ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে এক লক্ষ ১৯ হাজার ৯৩৩ হেক্টর।


ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গুপ্তমুন্সী গ্রামের আলু ক্ষেতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন কৃষক তাদের আলু ক্ষেতে পরিচর্যা করছেন। সেই আলু ক্ষেতের কিছু কিছু আলু গাছের পাতা মরে যেতে দেখা গেছে। মরে যাওয়া ওই সব আলু গাছের আলুও পচে গেছে।
ওই এলাকার আলু চাষি আব্দুর রহিম (৪০) বলেন, আমি প্রায় ৬৫ দিন আগে এক একর ৬০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছি। এতে সার ও কীটনাশক ও বীজসহ আমার প্রায় দের লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বছর এখনো আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও বর্তমানে আলু ক্ষেতে দাউদ ও গুনগুন পোকার (জাত পোকা) আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফলে বেশী ফলন নিয়ে চিন্তিত এ আলু চাষি।
কালা চান সিকদার (৬৫) নামের একই এলাকার আলু চাষি এ বছর দেড় একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, দাউদ ও গুনগুন পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আলু ক্ষেতে দুই বার ওষুধ দেওয়ায় পরেও কোন লাভ হচ্ছে না। আলু চাষ করে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি।


ওই এলাকার চাষি আবুল কালাম (৭০) বলেন, আমি কয়েক বছর আগে দেড় লাখ টাকা খরচ করে ৩ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। কিন্তু পোকার আক্রমণ এবং বৃষ্টির কারণে সব আলু নষ্ট হয়ে গেছে। এতে লোকসান হওয়ায় এখন আর আলু চাষ বন্ধ করে দিয়েছি। একই কারনে আলু চাষ করে লোকসানের মুখে পড়ে আলু চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন মনির হোসেন (৩০) নামের আরেক চাষি।
মনির হোসেন জানান, তিনি গত বছর ৩ লাখ টাকা খরচ করে দুই কানি জমিতে আলু চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে তিনি এ বছর আলু চাষ করেননি। শুরুতে মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও এখন রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দেয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় রয়েছেন আলু চাষিরা। এমনকি সার, ওষুধ ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাঙ্খিত ফল মিলছে না বলে জানান তারা।


এ বিষয়ে ইলিশা ইউনিয়নের দায়িত্বরত সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিলন চন্দ্র দে বলেন, জমিতে ব্লিসিন পাউডার ও বরিক পাউডার দিয়ে বিষ শোধন করে এবং জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সার ব্যবহার করার জন্য আমরা আলু চাষিদের পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু কৃষকরা নগদ বর্গা জমি রেখে সেই জমিতে আলু চাষ করেন। তবে, কৃষকরা সাধারণত বর্গা রেখে জৈব সার দিয়ে জমি উর্বর করতে চায়না। এতে করে আলু ক্ষেতে জাত পোকা ও দাউদসহ বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয়। তিনি আরও বলেন, যদি কৃষি অফিস থেকে সকল আলু কৃষকদের একত্র করে যদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে বিভিন্ন রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে আলু ক্ষেতকে অনেকটা রক্ষা করতে পারেন।
এ ব্যাপারে ভোলা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বৃহস্পতিবার বলেন, আলুক্ষেতে সামান্য পোকার আক্রমণ হলেও এখনো আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। আলু তোলার আগ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এ বছরও আলুর লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে বলেও মনে করেন কৃষি কর্মকর্তা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।