বদলে যাচ্ছে ভোলার বক্ষব্যাধি ক্লিনিক

ভোলার সরকারি বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে গত কয়েক বছর আগেও নাকে রুমাল চেপে ঢুকতে হতো রোগীদের। চারপাশ থেকে আসা দুর্গন্ধে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তারা। তখন ক্লিনিকের মেঝে ছিল মোজাইক। সেই মোজাইকের মেঝে ছিল ময়লা-আবর্জনা। ছিলনা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারি। রোগীর সংখ্যাও ছিল কম। গুটি কয়েক রোগী দেখা গেলেও তারা সঠিক চিকিৎসা সেবা পেতেন না। ক্লিনিকের অনেক কক্ষই ছিল পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত। সেই সব কক্ষে ছিল মাকড়সার জাল বিছানো। এতে করে রোগিরা সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতো।
কিন্তু গত রোববার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভোলা জেনারেল হাসপাতালের পেছনে অবস্থিত বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেই ক্লিনিকের মেঝেতে স্থাপন করা হয়েছে নতুন টাইলস। দেওয়ালে করা হয়েছে রং। ঝকঝকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। নেই কোন দুর্গন্ধও। দেখে যেন অনেকটা অবাক হওয়ার মতোই।
রোগী ও ক্লিনিকের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জানান, গত কয়েক বছর আগে বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের মেঝেতে মোজাইক ছিল। কিন্তু এখন সেই মেঝেতে টাইলস স্থাপন করা হয়েছে। বহু পুরনো এ ক্লিনিক ভবনে নতুন করে রং করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্লিনিকে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, আধুনিক জিন এক্সপার্ট মেশিন ও টিভি পরীক্ষা করার জন্য মাইক্রোস্কোপসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি। অথচ গত কয়েক বছর আগে এক্স-রে মেশিনও ছিল বিকল। এ ছাড়া প্রতিটি কক্ষই যেন ঝকঝকে তকতকে। রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারিও। গত দুই সপ্তাহ আগে এ ক্লিনিকে সাকিব নামে একজন এন্টি ল্যাব ও রাখী নামে একজন রেডিও গ্রাফার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার শ্যামলীর এনটিভি থেকে মাসিক চুক্তিতে তাদেরকে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। তারাই বক্ষব্যাধি এ ক্লিনিকে আসা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। রোগীরাও পাচ্ছেন অনেকটা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা। ফলে যেন বদলে যাচ্ছে ভোলার বক্ষব্যাধি এ ক্লিনিক ও হাসপাতালের পরিবেশ। কথা হয় ক্লিনিকের হোম ভিজিটর খায়রুন নেছার সঙ্গে।
তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এ ক্লিনিকে কর্মরত রয়েছি। গত কয়েক বছর আগে মোজাইক করা মেঝেতে পরিস্কার করলেও সহসা ময়লা যেতনা। তাই তখন দুর্গন্ধ ছড়াতো। কিন্তু এখন মেঝেতে টাইলস বসানো হয়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। ভবনে নতুনভাবে রং করানো হয়েছে। এতে করে ঝকঝকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। রোগীর সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে। রোগীরা অনেকটা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।
ক্লিনিকের মেডিক্যাল টেকনোলজিস এ্যান্ড রেডিওলজিস্ট রাখী বলেন, এ ক্লিনিকে নতুন একটি আধুনিক এক্সরে মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সেবা নিতে আসা ভোলা শহরের উকিল পাড়ার বাসিন্দা মালেকুর রহমানের স্ত্রী সাইফুন নেছা বলেন, গত বুধবার বক্ষব্যাধী ক্লিনিকে এসে বিনামূল্যে আমার স্বামীর কফ পরীক্ষা করিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ক্লিনিকের পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ। তার মতো বেশ কয়েকজন রোগী সরকারি এ ক্লিনিকের পরিবেশ ও সেবা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত জুনিয়র কনসালটেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সিফাত বিনতে আলমগীর বলেন, বর্তমান সিভিল সার্জনের সহযোগিতায় আগের চেয়ে ক্লিনিকের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ও রোগীদের সেবার মান বাড়াতে চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ ক্লিনিকের বাহিরে কোন সাইনবোর্ড ছিলনা। এখন গণপূর্ত অধিদফতরের সহযোগিতায় সিভিল সার্জন সেই সাইনবোর্ডেরও ব্যবস্থা করেছেন। খুব শিগগিরই ক্লিনিকের সামনে সাইনবোর্ড ঝুলানো হবে। তবে, এখনো অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারির পদ শূন্য রয়েছে। সেসব শূন্য পদ পূরন হলে ক্লিনিকটির পরিবেশ আরও পাল্টে যাবে বলেও মনে করেন সরকারি ক্লিনিকের এ কর্মকর্তা।
ক্লিনিক ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সিভিল সার্জন ডা. কেএম শফিকুজ্জামান ভোলায় যোগদান করে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনেন। এ ব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামান রোববার সকালে বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ও হাসপাতালটি পরিদর্শন করে ভোলার বাণীকে বলেন, বর্তমানে ক্লিনিকের বাহিরের এবং ভেতরের পরিবেশ ভালো। এক্সরে মেশিন ও জিন এক্সপার্ট মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। রোগী কম আসলেও তারা অনেকটা বিনামূল্যেই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। আগে সাইনবোর্ড ছিল না। এখন সাইনবোর্ডেরও ব্যবস্থা হয়েছে। কিছু সংখ্যক জনবলের দরকার। সেটাও চেষ্টা করা হচ্ছে। তখন এ ক্লিনিকের দৃশ্যপট আরও পাল্টে যাবে বলেও মনে করেন সিভিল সার্জন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।