দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন দরিদ্র মামুন, থেমে নেই জীবন

বাম পাশের চোখ দিয়ে মোটামুটি দেখলেও ডান পাশের চোখ দিয়ে দেখতে পারছেন না দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মো. আবু সাইদ মামুন (৩০)। তবুও থেমে থাকেননি তিনি। জন্ম থেকেই দু চোখের আলো থেকে বঞ্চিত মামুন তার ভেতরের জমে থাকা সব কষ্ট পেছনে ফেলে জীবনের সব আনন্দ খুঁজে নিয়েছেন কাজের ভেতরে। পৃথিবীতে কোনো কাজই যে ছোট নয় তা প্রমান করেছেন তিনি। ভোলা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে যুগীরঘোল এলাকার জৈনপুরী পীর সাহেবের খানকা সড়কের পাশে অন্যের জমিতে একটি চায়ের দোকান দিয়েছেন দৃস্টি প্রতিবন্ধী মামুন। চা বিক্রি করে যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়ের সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন মামুন। তার মুখে সব সময় হাসি লেগেই আছে। দেখে মনে হয় তিনি দুচোখ দিয়ে পৃথিবীর সব কিছু দেখতে পান।
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাঠালী গ্রামের মোঃ সেলিমের ছেলে মো. আবু সাইদ মামুন জানান, ওই এলাকার জনৈক হারুন মিয়ার জমিতে চা দোকান দিয়ে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছিলেন প্রায় ১০ বছর। গত দুই মাস আগে জমির মালহক সেই জমি বিক্রি করে দেওয়ায় পাশেই ৯ নম্বর ওয়ার্ডে যুগীরঘোল জৈনপুরী পীর সাহেবের খানকা সড়ক এলাকায় জনৈক আলী আশ্রাফ মন্টুর জায়গায় ফের চায়ের দোকান দিয়ে সেখানে চা বিক্রি করছেন।


মামুন জানান, অন্ধ হয়েই এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করেন। তিনি আরও জানান, চা বিক্রি করে তিনি প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন। তা দিয়েই চলছে তার সংসার। এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী হানিফ স্টোরের সত্বাধিকারী মোঃ হানিফ বলেন, মামুন অন্ধ হয়েও চা বিক্রি করে তার সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিক্ষা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি কাজ করে খেতে বলছেন। তাই, মামুন ভিক্ষা না করে কাজ করে খাচ্ছেন।
জমির মালিক আলী আশ্রাফ মন্টু বলেন, মামুন একজন অসহায় দরিদ্র যুবক। আগে যে জায়গায় মামুন চা বিক্রি করে সংসার চালাতেন সেই জমির মালিক তার জমি বিক্রি করে ফেলায় আপাতত আমার জমিতে সে চা বিক্রি করে তার সংসার চালাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন ভোলার বাণীকে বলেন, মামুন একজন অসহায় দরিদ্র প্রতিবন্ধী। তার বাবা-মা কেউ নেই। তারা দুই ভাই দুই বোন। আমি ওদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছি। ওর ছোট ভাইকে চাকুরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মামুনও নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাইনুল ইসলাম শামিম বলেন, অন্ধ হয়েও যে জীবিকা নির্বাহ করা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মামুন। সে ভিক্ষা না করে খেটে খাচ্ছে। দুচোখে ভালো করে দেখতে পারছে না। তবুও থেমে নেই তার জীবন। পরিশ্রম করে চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে।

 

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।