আজ ‘বসন্ত’

করোনা অতিমারির ধাক্কায় জীবন-জীবিকা যখন পর্যদুস্ত, মৃত্যুর মিছিলের তালিকায় স্বজনের নাম, ঠিক সে সময় বাংলার প্রকৃতিতে এসে গেছে ঋতুরাজ বসন্ত। এত বেদনা, তবু প্রাণে প্রাণ জাগায় বসন্ত। রবীন্দ্রনাথের গানের কথায় যেন, ‘রোদনভরা এ বসন্ত, সখী, কখনো আসে নি বুঝি আগে/কুঞ্জদ্বারে বনমল্লিকা সেজেছে পরিয়া নব পত্রালিকা’।
পহেলা ফাল্গুন আজ। প্রকৃতি সেজে উঠছে নানা রঙে। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতির মতো মানুষের মনেও ছড়িয়ে পড়ে বসন্তের রং। বসন্তকে বরণ করে নিতে তাই প্রকৃতির রঙে রং মিলিয়ে সবাই মেতে উঠবে উৎসবে। দখিনা বাতাসে আমের মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণ, কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতান, ডালে ডালে কচিপাতা আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। মন উদাস করা এই ঋতুর আহ্বানে সাড়া পড়েছে তারুণ্যে।
বসন্ত আজ এসেছে ফুলবনে, পাতায় পাতায় পল্লবে, পল্লবে। ডালে ডালে পলাশ, শিমুল আর বকুলের সৌরভে শীতের ঝড়া পাতার মর্মরে মর্মরে আজ থেকে ধ্বনিত হবে বসন্তের কোকিলের কহু কহু তান। পৌষ আর মাঘের শীতার্ত দিনগুলোর পরে ফ্লাগুন মাসের প্রথম দিনে বাঙালি বরণ করে নেবে তাদের প্রিয় বসন্তকে।
বাঙালি ললনার পরনে হলুদ রঙের শাড়িতে লাল পাড় আর তরুণ-যুবাদের হলুদ পাঞ্চাবি, কোর্তা গায়ে দিয়ে বসন্তের প্রথম দিনে আজ জমজমাট হয়ে উঠবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির চত্বর, শাহবাগ আর রমনার সবুজ প্রান্তর।
আজ বেজে উঠবে সুরে সুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গান ‘ফুলে ফুলে দুলে দুলে বহে কে বা মৃদু বায়ে/কে জানে কিসের লাগি প্রাণ করে হায় হায়।’ কিংবা ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে/তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/কোরো না বিড়ম্বিত তারে/আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো/আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো/এই সংগীত-মুখরিত গগনে তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো/এই বাহির ভুবনে দিশা হারায়ে দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।
রেকর্ডে বেজে উঠবে লতা মঙ্গেশকরের সেই গানÍ‘পাখি আজ কোন সুরে গায়/কোকিলের ঘুম ভেঙে যায়/ আজ কোনো কথা নয়/শুধু গান/আরো গান/আজ বুঝি দুজনের মন/কতো সুরে করে আলাপন/আজ কোনো কথা নয়/শুধু গান আরো গান…।’

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।