এমপিসহ বিভিন্ন মহলের শোক

ভোলায় জনগণের জমিদারের মৃত্যু ॥ দাফন সম্পন্ন

দৌলতখান উপজেলার স্মরণকালের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, সাবেক পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান এবং জনগণের উপাধি দেওয়া জমিদার মাকসুদুর রহমান সিকদার মৃত্যু বরণ করেন। তিনি শনিবার রাতে ঢাকায় একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল (৭২) বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ১ মেয়েসহ অংখ্য গুনগ্রাহী এবং আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। ছেলে-মেয়েরা সকলেই প্রবাসে বসবাস করছেন। এদিকে দৌলতখান পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে পৌরসভাটি দিনব্যাপী শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন এবং সারাদিন সকল প্রকার দোকান-পাট বন্ধ রাখেন।
অন্যদিকে ঢাকা থেকে রোববার সকালে তার গ্রামের বাড়ী দৌলতখানে লাশ আনা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্মের অবতারনা ঘটে। দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষ ছুটে আসে শেষ বারের মত এক নজর দেখার জন্য। রোববার আসর নামাজ শেষে দৌলতখান পৌরসভায় স্মরণকালের জানাযা শেষে দৌলতখানের উত্তর মাথায় গোলাম রহমান সিকদার বাড়ীর পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
মাকসুদুর রহমানের বর্নাঢ্য জীবন : মাকসুদুর রহমান সিকদার দৌলতখানের একজন বরেণ্য রাজনৈতিক নেতা। তিনি ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগে মত পার্থক্যে তিনি জাসদে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে দৌলতখান উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি, সভাপতি এবং পৌরসভার চেয়ারম্যান হন। তার কর্মময় জীবনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল আশির দশকে মেঘনা নদীর মাঝে চর নিয়ে লড়াইয়ের নেতৃত্ব প্রদান। চরটি জেগে ওঠলে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি এবং দৌলতখানের জনগণের মধ্যে ভূ-অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু হয়। দৌলতখানের ভূমিহীন কৃষকদের নতুন জেগে ওঠা চরে বসতি স্থাপন করে তাদের ভূ-অধিকার প্রতিষ্ঠার ইঞ্চি ইঞ্চি সংগ্রামের নেতৃত্ব প্রদান করেন মাকসুদুর রহমান সিকদার। নিজের চৌকষ নেতৃত্ব ও সাহসিকতায় চরে তিনি দৌলতখানের অসহায় মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় তার যুক্তি ও তথ্য নির্ভর উপস্থাপনে প্রতিপক্ষকে পরাভূত করে অধিকার ছিনিয়ে আনেন।
ভূমিহীন অসহায় মানুষের কল্যাণে নিজের সর্বস্ব উজার করে দিয়ে ভূমিহীনদের ভালবাসায় সিক্ত হন এবং তারা তাকে জমিদার খ্যাতি প্রদান করেন। সাধারণ মানুষের ভালবাসার খ্যাতিটি তার জীবনে স্থায়ী রূপ লাভ করে। পরবর্তীতে তিনি মাকসুদুর রহমান সিকদার নয়; মাকসুদ জমিদার হিসেবেই খ্যাত হন। তিনি একজন নিরহংকার ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন। সমাজের খ্যাতিমান পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি চরের মধ্যে সাধারণ মানুষদের নিয়ে প্রায়শই ভোজ উৎসবে মেতে উঠতেন এবং শীর্ণ মানুষগুলোকে বুকের সঙ্গে আগলে রাখতেন। সাধারণ মানুষের প্রিয় মানুষটি দীর্ঘদিন যাবত কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
মরহুমের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল, সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহীম, ভোলা-১ আসনের সাবেক এমপি আন্দালিভ রহমান পার্থ, জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর-রশিদ-ট্রুম্যান, জেলা বিজেপি সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন, সাধারণ সম্পাদক মোতাছিম বিল্লাহ, ভোলার বাণী পরিবারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।