মধ্যরাত : ৪২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : ডোরার ফোন পেলাম পৌঁছে ফোনে ছোট্ট একটু খবর প্রশান্ত, আমি ভগবানের কৃপায় ঠিক মত আসছি। তুমি সুখে থাক। শুধু এইটুকু কথা ? এতদিন এখানে থাকল আমার জন্য কি একটুও ওর মায়া পড়েনি ? একটুও কি ভালবাসা মন জড়ায়নি ? একটুওকি মন বলেনি, প্রশান্ত তোমাকে আমি ভালবাসি ? মেয়েদের মন নাকি খুব নরম শুনেছি লোকে বলে। কিন্তু দেখলাম শক্ত মেয়ের মনও আছে, যাক যেভাবে ও সুখে থাকতে চায় থাকুক, আমি ওকে কষ্ট দিতে চাইনে। আমার বয়স অনেক হতে চলেছে। আমি এখন পূর্ণাঙ্গ যৌবন থেকে বয়সের সিড়ি ভেঙ্গে পৌরত্বেও দিকে এগিয়ে চলেছি। আমার সম্মুখে মরিচিকা ভবিষ্যৎ আর পিছনে স্মৃতিময় অতীত।
দোলার টেলিগ্রাম পেলাম বৃটিশ এয়ার ওয়েজে বিকাল ৩টায় আসবে। মনটা একটু হাল্কা লাগলো, তবু একটু আদর, একটু যতœ, একটু শ্রদ্ধা পাওয়ার আশায়। কতদিন রক্তের সম্বন্ধের কেউকে কাছে পাইনি। কি জানি মমতায় মাখানো সে মুখ- মনে মনে ভাবলাম ও কি পছন্দ করে, কি খেতে ভালবাসে ? কি এনে রাখব, মেয়েরা নাকি শাড়ী খুব পছন্দ করে ? আবার ভাবলাম ও আসুক, ও নিজে পছন্দ করে কিনবে, সেটাই ভাল হবে। ঘরে যাওয়া দরকার, জিনিস পত্র কেনা-কাটা করা ছিল। আর কিছু কিনতে হোলও না। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বুভুক্ষিত আকাঙ্খিত সেই দিন, সেই সময় এয়ারপোর্টে গেলাম। শুনলাম বৃটিশ এয়ার ওয়েজ এসে গেছে। মনে মনে ভাবলাম দোলাকে-ত আমি চিনি না, কখনও দেখিনি। কত বিচিত্র রকমের লোক নামছে, বাঙ্গালী দেখলেই বুঝব হয়তঃ চিনে ফেলতে পারব।
সেদিন বোধ হয় দু-চার জন বাঙ্গালী নামল। দু’জন বয়স্ক ভদ্র মহিলা কারো মা হবে। আর একজন মধ্য বয়সী কালো, খুব পান খাচ্ছে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আর একটি কুড়ি বাইশ বছরের খুব ফর্সা, হাল্কা গড়নের শাড়ী পড়া পেছনে বেশ বড় বেনী করা, দু’কানে দুটু সোনার রিং, বড় বড় চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে পরিচিত কাউকে খুজছে মেয়েটি। এয়ারপোর্টের আইন কানুন শেষ করতে ঘণ্টা খানেক লেগে গেল। এরপর আউটে এল, আমি এগিয়ে গেলাম প্রশ্ন রাখলাম, মিস দোলা ? মেয়েটি হেসে উঠল, আপনি-ই তাহলে আমার দাদু মিষ্টার প্রশান্ত ? আমি হেসে বললাম, তাহলে দু’জনেরই চিনতে ভুল হয়নি ?
বললাম পথে তোমার কষ্ট হয়নি ? বলল না, দিদি কেমন আছে, দিদি আমাকে ভুলে যায়নি-ত ? দোলা বলল, ভাইকে কি বোন ভুলে যায় ? মাল পত্র গাড়িতে তুলে নিলাম। বললাম, দোলা এতকি জিনিস এনেছ, এত জিনি কেন ? দোলা মুচকি হাসল, দিদিমা দিয়েছে। অনেক খানি পথ ড্রাইভ করে আসছিলাম। আসতে আসতে অনেক কথা মনে হল। সত্যি রক্তের ডাক তার কত দাম। আমার দিদি আমার কথা মনে করে কতকি দিয়েছে। ছোট ভাইটাকে তার মনে পড়ে, ¯েœহ করে ভালবাসে, ভালজানে। একটু ভালবাসার জন্য আমি উদাস হয়ে ফিরি। আর আজ আমার দুয়ারে বড়দি’র ভালবাসা, ¯েœহ আকুল আকুতি হয়ে ঘোরে।
বাসায় এলাম। দোলা গাড়ী থেকে নেমে হন হন করে উপরে উঠে গেল। আমি জিনসপত্র গুলি একটা একটা করে তুলছি। দোলা উপর থেকে নীচে তর তর করে নেমে এল। ওমা দাদু আমাকে দিন, আমি নিয়ে যাচ্ছি। আমি বললাম, পারবে না, আমি নেই। সেকি আমি নেব আপনার কিছু করতে হবে না, দিদিমা বলে দিয়েছে আমাকে সব কাজ করতে, আপনাকে দেখাশুনা করতে। আমি হাসলাম আর বললাম, আমাকে অকর্মণ্য করে তুলতে। সব প্যাকেটগুলো খুললাম, খেজুরের পাটালি, কুমড়োর বড়ি, চালের গুড়ো, বড় চিংড়ি মাছ ভাজা, লাউ, করল্লা, ভাল ঘি, ঝাল আচার, পাঞ্জাবী, ধুতি, গায়ের দামী শার্ট, নারকেলের পিঠে, বড়দি কোনটা বাদ রাখেনি।

(চলবে————–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।