সর্বশেষঃ

নানা সংকটে বিলুপ্ত ভোলার সিনেমা হল

ফাইল ছবি।

বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে একসময় সিনেমা হলের জনপ্রিয়তা ছিল। কালের বিবর্তনে টেলিভিশন, মোবাইল, কম্পিউটার আসায় সিনেমা হলের গুরুত্ব কমছে। তবে সিনেমা হলে পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি দেখার যে তৃপ্তি তা অন্য কোন মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব না।

দ্বীপ জেলা ভোলায় পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠেছে ২৬টি সিনেমা হল।

হলগুলোর মধ্যে রয়েছে-সদর উপজেলায় অবসর হল, রূপসী ও অনুপম; বোরহানউদ্দিনে রাজমনি, চিত্রমনি ও রুপালী; দৌলতখানে বিউটি, আনন্দ, ডায়মন্ড ও অন্তরা; লালমোহনে লালমনি, বিনোদন, মেঘনা, মধুছন্দা ও সংগীতা; তজুমদ্দিনে স্বাধীন, শশী ও সখী; চরফ্যাশনে সাগরি, ফ্যাশন, সাগর, সবুজ, দুলারী ও রঙ্গিলা এবং মনপুরায় সনি ও ঝলক সিনেমা হল।

এ ছাড়া ও ভোলার গাজীপুর রোডে এক সময়ে জনপ্রিয় সিনেমা হল ছিলো চাঁদমহল যা আজ বিলুপ্ত।

তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় সদর উপজেলায় দুইটি সিনেমা হলের একটি রুপসী সিনেমা হল আরেকটি অবসর সিনেমা হল।

এ দুইটি সিনেমা হলই এক সময় ভোলার মানুষের হৃদয়ে ঝংকার তুলতো। এখন সেই সিনেমা হলের দুইটির মধ্যে অবসর ভেঙ্গে  নির্মিত হচ্ছে অট্টালিকা মার্কেট এবং রুপসী নামে মাত্র রয়েছে সিনেমা হল। ২০০২ সালের দিকে দেশব্যাপী সিনেমা হলে বোমা হামলা হলে মূলত সিনেমা হলগুলো দর্শক সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে থাকে। এছাড়া মাঝখানে অশ্লীল ছবির বেপরোয়া নির্মান ও প্রদর্শনে মানুষের মাঝে এক ধরনের হল বিমুখতা দেখা দেয়। দেশে ভালো ছবি নির্মাণ না হওয়ায়ও সিনেমা হলে দর্শক খরা শুরু হয়। দর্শক সংখ্যা কমে যাওয়ায় ছবির ব্যয় ওঠানোই হল মালিকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে সিনেমা হলের মালিকরা এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।

সিনেমা হলের ব্যবসা ছেড়ে দেয়া মালিকরা জানান, ‘সিনেমা হলের ব্যবসা করে ঠিকমতো কর্মচারীদের বেতন দেয়াই কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া দর্শক চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে হল বন্ধ করে দিতে আমরা বাধ্য হই। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সদর উপজেলা সদর রোড সংলগ্ন অবসর সিনেমা হল এখন নির্মাণাধীন মার্কেট হচ্ছে। পান বাজার সংলগ্ন রুপসী সিনেমা হল ও  খালি পরে রয়েছে। অথচ এক সময় বাংলা ছবি দেখতে এই হল দুটোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় থাকতো।

ইলিশা সড়কের পাশে বাপ্তার অনুপম সিনেমাহলের সাবেক কর্মচারী আরিফুল ইসলাম জানান, ‘ভাই আর লোকসান দিয়ে কোনোভাবেই সিনেমা হলের ব্যবসা চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই মালিক পক্ষ সিনেমা হলের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। আমরাও অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছি।

বোরহানউদ্দিনের রাজমনি হল সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান জানান , ‘হলের ব্যবসা করে তেমন লাভ হয় না। দর্শকরাও আগের মতো সিনেমা হলমুখী নয়। এর চেয়ে মালিকরা অন্য কাজ করে বেশি বেনিফিট পাচ্ছে।

ভোলার সিনেমা হলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মী মোশারেফ অমি বলেন, দেশীয় ছবির পাশাপাশি এ প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় বাংলা, হিন্দি ছবি খুব চলতো। উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ছবি খুব দেখত মানুষ। মর্নিং শোতে ইংরেজি ছবি ছাড়াও বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টার শো-তে দর্শকরা টাকা দিয়েও টিকিট পেতেন না অনেক সময়। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে টিকিট বিক্রি হতো ব্ল্যাকে। সেদিন আর ফিরবে না। তবে এখনও ইচ্ছা হয় লাইট হলে গিয়ে ছবি দেখতে।

সিনেমা হলে দর্শক বিমুখ হওয়া প্রসঙ্গে ভোলা সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম জানান, ১৫ থেকে ২০ বছর আগে প্রেক্ষাগৃহগুলো ছিলো দর্শকে ভরপুর। ওই সময় সাধারণ মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে সিনেমা হলে যেতেন ছবি দেখার জন্য। কিন্তু এখন আর তা দেখা যায় না। হলগুলোর অব্যবস্থাপনা আর ভেতরকার অপকর্মের কারণে সিনেমা হলে যাওয়াকে এখন নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। কেউ এটাকে এখন ভালো চোখে দেখে না। এ ছাড়া হলের আসন, পর্দা ও শব্দব্যবস্থাপনার বেহাল দশা তো আছেই।

ভোলা থিয়েটারের এক সদস্য জানান, রুচিশীল সিনেমা তৈরি হলে অবশ্যই দর্শক সিনেমা হলে আসবে। যেমন- ‘মনপুরা’, ‘আগুনের পরশমনি’, ‘মনের মানুষ’ ছবিগুলো দেখার জন্য মানুষ সিনেমা হলে হুমরী খেয়ে পড়তো। তিনি মনে করছেন, সিনেমা হলগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে নির্মাতাদের ভালো ছবি নির্মাণ করতে হবে। সরকারেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উচিত, যেন দর্শক আবার সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার উৎসাহ পায়।

ভোলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা জানান, সিনেমা হল বন্ধের কারণে ভোলা এখন সিনেমা হল শূণ্য। দর্শকরা নির্মল আনন্দের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।