ভোলার তাড়ুয়ার দ্বীপে পাখিদের ভয় “অবৈধ খুঁটি”

ভোলার সর্বদক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশনের ঢালচর ইউনিয়নের দ্বীপের নাম তাড়ুয়ার দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলাভূমী সমুদ্র সৈকতের একদিকে বালুর সৈকত আর অন্যদিকে ম্যানগ্রভ বনাঞ্চল। আর প্রাকৃতিক এ মনোমুগ্ধকর নয়নাভিরাম এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন শত শত মানুষ এ দ্বীপে আসছেন। চারিদিকে সাগরবেষ্টিত তাড়ুয়ার দ্বীপটি এখন ভোলা জেলার অন্যতম একটি পর্যটনস্পটে পরিনত হয়েছে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে ভোলা জেলা সদরসহ বাহিরের বিভিন্ন জেলা থেকে ওই দ্বীপ চরে ঘুরতে যান অসংখ্য পর্যটক। এ ছাড়া শীত মৌসুমে অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখরিত থাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাড়ুয়ার দ্বীপ। তখন ওই দ্বীপটি আগন্তুক পর্যটকদের আরও আকর্ষনীয় করে তোলে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় অসাধু কিছু জেলে ঢালচর ইউনিয়নের তাড়ুয়ার দ্বীপে মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে বিছিয়ে দিয়েছে খুঁটি জাল। এতে একদিকে জেলার অন্যতম পর্যটনস্পট হিসাবে পরিচিত তাড়ুয়ার দ্বীপে আগন্তুক পর্যটকদের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে ওই জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে অতিথি পাখি এবং নদী ও সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। নষট হচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্য।
ওই দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়রা জানান, তাড়ুয়ার দ্বীপের নয়নাভিরাম অপরুপ চিত্র দেখতে তারা সেখানে ঘুরতে এসে খুঁটি জাল বিছানোর কারণে তাদের অবাধে চলাচলে অনেকটা বাধাগ্রস্ত করছে। তারা আরও জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থেকে স্থানীয় জেলে আবু তাহের, শফি মাঝি, আকবর, মান্নানসহ কিছু অসাধু জেলে তাড়ুয়ার দ্বীপের কয়েক মাইল জুড়ে বিছিয়ে রেখেছে অবৈধ খুঁটি জাল। এতে ওই জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে অতিথি পাখি ও মাছ। ওই জালে আটকে পড়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অতিথি পাখি মারা গেছে। খুঁটি জালের ভয়ে ওই দ্বীপে এখন পাখির সংখ্যাও অনেক কমে আসছে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে তাড়ুয়ার দ্বীপ থেকে সম্প্রতি ঘুরে এসে ভোলা সদরের একজন সংবাদকর্মী অচিন্ত্য মজুমদার জানান, স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির মদদে কিছু অসাধু জেলে তাড়ুয়ার দ্বীপে মাইলের পর মাইল খুঁটি জাল ফেলে ওই দ্বীপের পরিবেশ যেমন বিনষ্ট করছে, তেমনি অবৈধভাবে খুঁটি জাল ফেলে রাখার কারণে ধরা পড়ছে অতিথি পাখি ও বিভিন্ন প্রজাতের মাছ। এ ছাড়া তারুয়া সৈকতের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধা বিবি মরিয়ম বলেন, চেয়ারম্যান ছালাম হাওলাদারের ওয়ার্ডারে পুরা গাঙে জাইল্যারা খুডা জাল দিয়া মাছ ধরে। তিনি আরও বলেন, জোয়ারে মাছ আটকাইলে ভাডার সময় আতাইয়া মাছ ধরে।


আরেক বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান জেলেগোরে দাদন দেয়। আর জাইল্যারা মাছ ধইর্যা চেয়ারম্যানের মাছের গদিতে দেয়। চেয়ারম্যানের নির্দেশ ছাড়া এলাকায় কিছু হয়না বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলে আবু তাহের বলেন, খুটা জাল অবৈধ না। এটা সব জায়গায় চলে। বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন সবাই জানে। তারা কিছু বলেনা।
এ ব্যাপারে ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঃ ছালাম হাওলাদার বলেন, এখানে জেলেরা খুটা জাল ফেললেও আমি দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা করবো। তবে, এ জালে রাতের অন্ধকারে ২-১ টা পাখি আটকা পড়লেও তেমন কোন ক্ষতি হয়না।
এ ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, নদীগুলোতে খুঁটি জালের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তারুয়ার দ্বীপে এ ধরনের অবৈধ কোন খুটি জাল ফেললে সেগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে।
এ বিষয়ে ভোলা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এম এ কায়সার বলেন, সেখানে আমরা এর আগেও অতিথি পাখিসহ বিভিন্ন পাখি চোরদের ধরেছি। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে বলেও জানান তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।