ভোলায় যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে যাত্রীবাহী লঞ্চ

যাত্রীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ভোলা থেকে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন নৌ রুটে চলাচল করছে বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চ। অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে যেসব সামগ্রী তাৎক্ষণিক দরকার তা রাখা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে। এ ছাড়া লঞ্চের ইঞ্জিন কক্ষের পাশে অরক্ষিত অবস্থায় ডিজেল ভর্তি ব্যারেল রাখা বড় গ্যাস সিলিন্ডার বসিয়ে রান্না করা চা সিগারেটের দোকান পরিচালিত হওয়ায় অগ্নিকা-ের ঝুঁকির আশঙ্কাও করা হচ্ছে। লঞ্চে সময়মত আনসার বাহিনীর সদস্যদের না থাকা ও সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটলেও তা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ফলে ছোট ছোট দুর্ঘটনার পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানি। প্রায়ই সাধারণ যাত্রীরা ছিনতাইকারী অজ্ঞান পার্টি, জাপিং পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। খোয়া যাচ্ছে যাত্রীদের টাকা-পয়সা, স্বর্নালঙ্কারসহ বিভিন্ন মালামাল। এসব বিষয়গুলো যাত্রীরা লঞ্চ স্টাফদের জানালেও তারা আমলে নিচ্ছে না। আর মামলা দায়ের করলেও কোন লাভ হচ্ছে না।
যাত্রীদের অভিযোগ, চোর-বাটপারদের সাথে হয়তো লঞ্চ স্টাফদের সখ্যতা থাকায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গত ৮ নভেম্বর ঢাকা সদর ঘাটে ভোলা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ গ্লোরী অব শ্রীনগরের যাত্রী ভোলার নাজিউর রহমান ডিগ্রী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এম ফারুকুর রহমানের তালাবদ্ধ কেবিনে ঢুকে তার স্ত্রীর হাত ব্যাগ চুরি করে নিয়ে যায়। চুরি হয়ে যাওয়া ওই হাত ব্যাগে সাড়ে ৪ ভরি ওজনের একটি স্বর্নের হার, একটি হীরার আংটিসহ প্রায় ১৫ ভরি স্বর্নালঙ্কার এবং নগদ ৪৫ হাজার টাকা ছিল বলে জানান যাত্রী এম ফারুকুর রহমান। বিষয়টি লঞ্চের একজন কেরানীকে জানালেও তিনি কোর্নপাত করেন নি। এ ঘটনায় সদরঘাট নৌপুলিশ কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলে সেটি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।


নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক লঞ্চে পর্যাপ্ত লাইফ বয়া, ফায়ার বাকেট, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, বালির বাক্স ও কেবিনে লাইফ জ্যাকেট থাকার কথা থাকলেও ভোলা থেকে ঢাকা, বরিশাল নৌ রুটে চলাচলকারী অধিকাংশ যাত্রীবাহী লঞ্চে তা পর্যাপ্ত নেই। এসব নৌ রুটে জীবন হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। তাই শতভাগ যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে লঞ্চগুলোতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ লঞ্চ যাত্রীরা। তবে, লঞ্চ কর্তৃপক্ষের দাবি তাদের লঞ্চে পর্যাপ্ত বয়া, ফায়ার বাকেট, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও আনসার বাহিনী সদস্যসহ যাত্রী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।
গত বুধবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার খেয়াঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নৌবন্দরের পন্টুনে নোঙর করা রয়েছে ভোলা-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী কর্নফুলী-১১, গ্লোরী অব শ্রীনগর-৭, এমভি ভোলা ও কর্নফুলী-৯। এর মধ্যে এমভি ভোলা সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে পন্টুন থেকে সটকে পড়ে। কর্নফুলী-১১ লঞ্চে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চের নীচ তলায় চায়ের দোকানের কাছেই রাখা হয়েছে বড় আকারের একটি গ্যাস সিলিন্ডার। ওই লঞ্চে কোন আনসার বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। গ্লোরী অব শ্রীনগরেও কোন আনসার সদস্যকে পাওয়া যায়নি। ওই লঞ্চের সুপার ভাইজার রুহুল আমিন অবশ্য দাবি করেন তাদের লঞ্চে ৩ জন আনসার সদস্য নিয়মিত অবস্থান করছেন। খেয়াঘাটে কোন পুলিশ সদস্যের দেখা মেলেনি।
একই সময়ে ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটে দেখা গেছে পন্টুনে ভোলা-বরিশাল নৌ রুটে চলাচলকারী দুইটি যাত্রীবাহী লঞ্চ অবস্থান করছে। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে একটি লঞ্চ ছাড়ার সময় না হলেও দ্রুত পন্টুন ত্যাগ করে নদীর মাঝে চলে যায়। এমএল মেঘদূত-২ লঞ্চের নীচ তলায় গিয়ে দেখা গেছে, চায়ের দোকানের কাছেই একটি বড় আকারের গ্যাস সিলিন্ডার। এ বিষয়ে ওই লঞ্চের মাস্টার সবুজ ও সুকানি গিয়াসউদ্দিন জানান, দ্রুত লঞ্চের চায়ের দোকান থেকে গ্যাস সিলিন্ডার অপসারণ করা হবে।
ভেদুরিয়া লঞ্চ ঘাটেও কোন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। ঘাটের অটোরিকশা চালক বজলু ও সিরাজসহ স্থানীয়রা জানান, ভেদুরিয়া লঞ্চ ঘাটে কোন পুলিশ নেই। লঞ্চ যাত্রীদের অভিযোগ, ভেদুরিয়া লঞ্চ ঘাট, খেয়াঘাট ও ইলিশা ঘাটে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও ঘাট ইজারাদারদের দৌরাত্ম্যে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে ভোলার সাধারণ লঞ্চ যাত্রীরা।


এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভোলা অফিসের উপ-পরিচালক আবদুর রাজ্জাক ভোলার বাণী’কে বলেন, লঞ্চগুলোতে অগ্নিনির্বাপণসহ সব বিষয়গুলো সাধারণত বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ দেখভাল করে। তাই, আমাদের তেমন নিয়মিত তদারকি করা হয়না। তবে, মাঝে মধ্যে লঞ্চগুলোতে প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে কিনা সে বিষয়টি নজরদারিতে রয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ভোলা বন্দর ও পরিবহণের সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম ভোলার বাণী’কে জানান, লঞ্চে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত ও যাত্রা নির্বিঘœ করতে বিআইডব্লিউটিএ কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিন লঞ্চ ছাড়ার আগে সার্ভে সনদ এবং নিবন্ধন হাল নাগাদ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক যাত্রী নিরাপত্তায় ও লঞ্চ মালিকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত নিরাপত্তা কর্মীদের কার্যক্রম তদারকি করছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।