ফুটবলের “মেঘকন্যা”

সাফ অনূর্ধ্ব -১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোস্তফা কামলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের একমাত্র জয়সূচক গোল করেন খাগড়াছড়ির “মেঘকন্যা” আনাই মোগিনি। দেশের হয়ে একমাত্র গোলটি করার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন ওই ফুটবলার।
খাগড়াছড়ির সবুজে ঢাকা সাতভাইয়াপাড়া গ্রাম। মেঘের রাজ্যের এই গ্রামের মেয়েটিই এখন পুরো বাংলাদেশের উৎসবের কারণ। তার গোলেই টানা দ্বিতীয়বারের মত মেয়েদের টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। পুরো দেশের পাশাপাশি উচ্ছ্বাসটা একটু বেশি ধরা দিয়েছে পার্বত্য জনপদ খাগড়াছড়িতে। জেলার মেয়ে মোগিনির গোলের দেশের এ বিজয়কে বড় করে দেখছেন স্থানীয়রা।
তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে সাতভাইয়াপাড়ায় বসবাস রিপ্রু ও আপ্রমা মোগিনি দম্পতির। অভাবের এই সংসারে আনাইয়ের জন্ম। শুধু আনাই নন, তার যমজ বোন আনুচিং মোগিনিও জাতীয় দলেরই খেলোয়াড়। আনাই জন্ম নেওয়ার দুই মিনিটের ব্যবধানে আনুচিংয়ের জন্ম। অভাবের সংসারে যমজ কন্যাসন্তান আসায় মোগিনি দম্পতির মধ্যে উৎসবের জায়গায় বেঁধেছিল হতাশা। কিন্তু এই দুই মেয়ের কারণেই আজ পাহাড়ি গ্রামে আলোকিত মোগিনি দম্পতি। রিপ্রু ও আপ্রমার দুই মেয়ে এখন বাংলাদেশের গর্ব।
যমজ বোন হলেও দুজনের চরিত্র কিন্তু ভিন্ন। আনুচিং ফরোয়ার্ড। প্রতিপক্ষের গোলমুখে তার বুক ভরা সাহস নিয়ে দুরন্ত পদচারণা যে কোনও ডিফেন্সের মাথাব্যথার কারণ। আছে ড্রিবলিং ও গতি। অন্যদিকে আনাই মগিনি ডিফেন্ডার। ঠা-া মাথায় নিজ দায়িত্ব পালনে তার জুড়ি নেই। আত্মবিশ্বাস তার মূল অস্ত্র। কখনই ঘাবড়ে যান না তিনি।
দুই বোনের ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পটাও এক। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফুটবল দিয়ে শুরু। খাগড়াছড়ি জেলায় মেয়েদের দল না থাকায় ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা দলের হয়ে খেলেছে দুই বোন। পরে ২০১৫ সালে খাগড়াছড়ি জেলা দলের হয়ে খেলে তারা জায়গা করে নেন অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলে। এরপর বয়সভিত্তিক দলেও খেলেছেন এক সাথে। ২০১৮ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব–১৮ সাফ জয়ী দলেও ছিলেন তারা। এবার তো এখন সারা বছর ঢাকায় ক্যাম্পে থাকতে হয়। আজ এই দেশ, তো কাল অন্য দেশে। দুই বোনকে ছাড়া এখন বাংলাদেশ দলের কথা ভাবাই যায় না। এবার তো অনূর্ধ্ব -১৯ চ্যাম্পিয়নশিপেও বাংলাদেশকে শিরোপা এনে দিলেন তারা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।