মধ্যরাত : পর্ব-২৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : ক্লাশে গেলাম কি পড়িয়েছি জানিনা। পাখির বুলির মত এক ধার থেকে বলে গিয়েছি। ছেলে মেয়েরা নোট করছে। অল্প কতক্ষণ ছিলাম মাথা ধরেছে, ভাল লাগছে না। বাসায় ফিরে আসার জন্য মনটা ব্যকুল, হয়ে উঠছে। তাড়াতাড়ি করে বাস ধরে ফিরে এলাম। বাসায় এসে দেখি ডোরা সুন্দর করে রাধা বাড়া করে ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছে। নিজেও পরিপাটি হয়ে সেজে-গুজে বসে আছে। লাল গাড় লাল একখানা সিল্কের শাড়ী, লাল ব্লাউজের সঙ্গে ম্যাচ করে পড়েছে। পায়ে ভেল ভেটের লাল চটি পড়ে আছে। বেনী লম্বা করে ছেড়ে দিয়েছে। কপালে লাল কুমকুমের টীপ। ভারি ভালো লাগল। মুগ্ধ নেত্রে আড় নয়নে ওকে আমি চুরি চুরি করে দেখছিলাম। ক্ষুধাও পেয়েছে খুব। খাব না ওকে দেখব। ওকে দেখলে মনে হয় ওর যৌবন বুঝি একটি তীক্ষè তলোয়ারের মত প্রজ্জলিত মশাল। মনে হয় যে কেউ ওর কাছে যাবে, ওকে স্পর্শ করবে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। খেতে বসলাম, ও আমার কাছে বসে তুলে তুলে খাওয়াল। খাচ্ছি আর ওকে বার বার একটু একটু দেখছি। না খেয়ে যেন ওকেই দেখতে ইচ্ছে করে। ওকেই দেখতে ভাল লাগে।
বিকেল গড়িয়ে এল। কোথাও যেতে ভাল লাগলো না। ডোরার সাথে গল্প করলাম। কথার যেন শেষ নেই। অনাদি অনন্তকালের কথা, অনেক অনেক রাত হয়ে এল। তবুও যেন আমার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ড্রইংরুমে বসে গল্প চলল। স্কুল ও কলেজ জীবনের কথা। মানুষের জন্য যে পৃথিবীতে এত সুখ, এত আনন্দ, এত উচ্ছলতা নেমে আসতে পারে, তা ছিল আমার অজানা। ডোরা তাই নিয়ে এল আমার জন্য। সেই রাতটার কথা আমার এখনো মনে আছে। সেই রাতটা ছিল আমার জীবনে বাসর রাতের মত। এমনি করে আনন্দে, উচ্ছাসে কয়টা দিন কেটে গেল। সুশান্তের আসার দিন এসে গেল। ডোরার ঘরেই উমার জন্য খাট পেতে ছিলাম। সুশান্তকে কাছে রাখলাম। শুয়ে শুয়ে দুই বন্ধুতে গল্প করা যাবে।
সেদিন দুপুরেই সুশান্ত আর উমা এসে গেল। উমাকে দেখে ডোরা খুব খুশী হয়ে গেল। কিন্তু ডোরাকে দেখে সুশান্ত উমা খুব সহজ মনে গ্রহণ করল না। ওরা আসার পর ডোরাই ওদের চা-নাস্তা দিল। সুশান্ত বলল, মেয়েটা কেরে ? নাÑনা ভদ্রমহিলা। আমি বললাম, আমার ক্লাশ ফ্রেন্ড ডোরা। ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসার। এখানে বেড়াতে এসেছে, ওর বোনরা কলকাতায়। সুশান্ত বলল, উমা যে কয়দিন আছ একটু গিন্নিপনা কর। আমরা সকলেই চাকুরীজীবি। একটু আমরা বিশ্রাম করি। মিস ডোরা, ওনিও বোধ হয় একটু বিশ্রামের জন্যই এসেছেন। যে কয়দিন আছি একটু হৈ হুল্লোর করা যাবে।

(চলবে—–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।