ভালোবাসা চাষে স্বাবলম্বী চাষীরা 

গোলাপ মূলত শীতকালীন ফুল। গোলাপ ফুল হলো সৌন্দর্য্য ও লাবন্যের প্রতীক। তবে বর্তমানে এর চাহিদা ও সৌন্দর্য্যের কারণে সারা বছরই গোলাপ চাষ করা হচ্ছে। বর্ণ, গন্ধ ও কমনিয়তায় গোলাপকে ফুলের রানী বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি সারাবছর গোলাপের চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জেলাতে গোলাপের চাষ করা হচ্ছে তার মধ্য ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার বিরুরিয়া ইউনিয়ন অন্যতম।

 চাহিদা বৃদ্ধি ও সম্মানজনক ব্যবসা হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এই অঞ্চলে গোলাপ চাষীর সংখ্যা। প্রায় তিন শতাধিক পরিবার গোলাপ চাষ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। দেশের বিভিন্নস্থানে তা সরবরাহ করে বয়ে এনেছেন সাভারের সুনাম।

ফুল উৎপাদনে সরকারী কোন পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় এসব ফুল চাষীদের। সার ও গোলাপ বীজের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বাড়লেও থেমে নেই তাদের পথচলা। তাদের জীবন সংগ্রামে কোন বাধাই যেন বাধা নয়। অদম্য উৎসাহে ক্লান্তিহীন পরিশ্রমও যেন হার মানে তাদের কাছে যখন ফুলে ফুলে ভরে যায় গোটা বাগান। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা সহযোগীতা পেলে এ ব্যাবসাকে আরো বিস্তৃত করে বিশ্ব বাজরে ছড়িয়ে দিয়ে ভূমিকা রাখতে পারে রাজস্ব আয়ে।

সরেজমিনে গিয়ে চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাভার উপজেলার মাটি, ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। সাধারণত পাকা মিলন, মেরেন্ডি, লিংকন এবং সাদা জাতের গোলাপের উৎপাদন অনেক ভাল হলেও লাভজনক হওয়ায় মেরেন্ডি জাতের গোলাপই চাষ করে থাকে এখানকার ফুল চাষীরা।

১৯৮০/৮২ সালের দিকে হল্যান্ড থেকে এ জাতের ফুল বীজ সূদূর হল্যান্ড থেকে এনে রাজধানীর মিরপুস্থ বোটানিক্যাল গার্ডেনে রোপন করা হয়। তখন থেকেই এর শুরু। ১৯৮৫/৮৬ সালের গোড়ার দিকে সেখানকার এক গবেষক সাভারের সাদউল্ল্যাহপুর মোস্তাপাড়া গ্রামে এর বীজ রোপন করে। তারপর থেকে এখানে বানিজ্যিকভাবে শুরু হয় গোলাপ ফুলের ব্যবসা। পরবর্তীতে তা সাভারের আশুলিয়া, বিরুলিয়া, রাজাসন, কাতলাপুর, মানিকগঞ্জের সিংগাইরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

গ্রামের নাম মোস্তাপাড়া। সাভার উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদউল্ল্যাহপুরে। রাজধানী ঢাকার অতি সন্নিকটে হলেও ভৌগলিক কারনে নানাবিধ সুবিধাবঞ্চিত এ এলাকার জনগণ। প্রায় ৩’শ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে গ্রামটিতে। জমি আবাদি হলেও শাক-সবজি ও অন্যান্য ফুলের তুলনায় এখানকার চাষীরা সিংহভাগ জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করছেন।

শ্যামপুরে প্রতি রাতেই বসে গোলাপের হাট। সব বয়সীরাই ফুল কাটার পর একে একে তাদের বাগানের ফুলগুলো নিয়ে আসে হাটে। শ্যামপুরে কাশেম মার্কেটের সামনে সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য ব্যবসায়ী এসে ভীড় জমায় কাশেম মার্কেটের সামনে। ধীরে ধীরে জমে উঠে ফুলের বেঁচা-কেনা।

ক্ষুদ্র চাষীরা তাদের ফুলগুলো বিক্রি করে দেন বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এসেও হাট থেকে ফুল ক্রয় করেন। প্রতি রাতে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার বেঁচা-কেনা হয় এ হাটে। বড় ব্যবসায়ীরা ফুল কিনে জড়ো করে পরবর্তীতে তা বিক্রির উদ্দেশ্যে ঢাকার শাহবাগে নিয়ে যান।

প্রান্তিক ফুল চাষী সত্তোরোর্ধ শাহজাহান মিয়া জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে এ ব্যবসা করছেন তিনি। এ ব্যবসা তিনি শুরু করলেও এখন তার ছেলে সবুর এ ব্যবসার দেখভাল করছেন।

তিনি বলেন, গোলাপ ফুল চাষ লাভজনক হলেও প্রতি বছর এর চারা পুলিং কাট করা হয়। পুলিং কাটের মাধ্যমে চারা উৎপাদনের সময় এক ধরনের পোকার আক্রমনে অনেক চারা মারা যায়। অনেক চেষ্টা করেও এর কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।

শাহজাহান মিয়ার ছেলে সবুর বলেন, আমাদের এই ফুলগাছের বয়স ১১ বছর চলে তবে এই গাছের বয়স ত্রিশ বছর থাকে বলে জানান তিনি।

প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা এসে অনেক ফুল নষ্ট করে পেলে বিশেষ করে ছুটির দিনে ভীর থাকে বেশি বলে ও জানান সবুর।

এব্যপারে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, সাভারে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করছে চাষীরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের জন্য যতটুকু করা দরকার আমি সবকিছুই করে যাচ্ছি। অনেক সময় আমি নিজে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তাদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন সব সময় মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে ফুল চাষীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ফুল বাজার জাতকরণ, কাটিং ও পোকা-মাকড় দমনসহ নানাবিধ সমস্যা নিয়েও আমরা সর্বক্ষণ তৎপর আছি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।